মালদা, 17 ডিসেম্বর: শীত পড়তেই বুনো শিয়ালের হানা শুরু হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ শিয়ালের পালের হামলায় জখম হয়েছেন 13 গ্রামবাসী ৷ ঘটনাটি ঘটেছে খোদ রাজ্যের মন্ত্রীর গড় হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন মন্ত্রী তজমুল হোসেনও ৷ তিনি এ নিয়ে বনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ৷
ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের মশালদা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাননপাড়া গ্রামে ৷ রবিবার জমিতে কাজ করছিলেন গ্রামবাসীরা ৷ সেই সময় তাঁদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় বুনো শিয়ালের পাল ৷ জখম হন 13 জন ৷ তাঁদের তড়িঘড়ি স্থানীয় মশালদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ গ্রামবাসীরা জানান, তাঁদের এলাকায় মাঝেমধ্যেই শিয়াল হানা দিচ্ছে ৷ অনেকের বাড়ি থেকে ছাগল-মুরগিও তুলে নিয়ে যাচ্ছে ৷ দু’দিন আগে স্থানীয় মাটিয়ারি এলাকায় 8 জনকে শিয়ালের দল আক্রমণ করে ৷ আতঙ্কে গ্রামবাসীরা সন্ধের পর বাড়ি থেকে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না ৷
শিয়ালের হামলায় জখম আবদুল রহিম জানাচ্ছেন, “মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিলাম ৷ হঠাৎ দেখি, শিয়াল ৷ আমি ভয়ে পিছিয়ে আসি ৷ কিন্তু ওরা আমার দিকে এগিয়ে আসে ৷ তারপর আমার উপর হামলা চালায় ৷ আমি হাতের হাঁসুয়া দিয়ে একটি শিয়ালের পায়ে আঘাত করি ৷ ফের যখন মারতে যাই, তখনই কয়েকটি শিয়াল একসঙ্গে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ আমার চোখ প্রায় খুবলে নিয়েছে ৷ ওরা একা থাকে না ৷ একসঙ্গে অনেকগুলো থাকে ৷ এদের দেখে সাধারণ শিয়াল মনে হয় না ৷ এসব অন্য জাত ৷ এখনই ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে আগামীতে লোকজন মারা যেতে পারে ৷ এরা বাড়ি থেকে বাচ্চা তুলে নিয়ে যেতে পারে ৷”
আরেক আহত জসিম আহমেদ বলেন, “আমি আর দুই ছেলে জমিতে ধান কাটছিলাম ৷ সেই সময় শিয়াল একটা ছাগল ধরতে আসে ৷ ছেলেরা ছাগলটাকে বাঁচাতে গেলে একটা শিয়াল এক ছেলের আঙুল ধরে নেয় ৷ ওকে বাঁচাতে গেলে শিয়াল আমার নাকে কামড় বসায় ৷ জমিতে থাকা লোকজন আমাদের বাঁচায় ৷ আমাদের এলাকায় প্রচুর শিয়াল ৷ প্রায়শই হামলা চালাচ্ছে ৷ অথচ বন দফতর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ৷ মন্ত্রী এসেছিলেন ৷ তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন ৷”
বন দফতরের ভালুকা রেঞ্জের আধিকারিক দিলীপ দাস জানিয়েছেন, “শীতের সময় শিয়ালের প্রজনন হয়ে থাকে ৷ এই সময় তাদের প্রচুর খাবারের প্রয়োজন পড়ে ৷ তাই তারা খাবারের খোঁজে গ্রামে ঢুকে পড়ে ৷ এই সময় প্রতি বছরই দফতরের তরফে এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয় ৷ এবারও হয়েছে ৷ তবে মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে ৷”
মন্ত্রী তজমুল হোসেন জানান, “দু’বছর আগে হরদমনগর গ্রামের অনেক মানুষকে শিয়ালে কামড়েছিল ৷ সেই সময় আমি বিষয়টি বিধানসভায় তুলেছিলাম ৷ গত বছর তেমন কোনও ঝামেলা হয়নি ৷ এবার ফের মিলনগড় সংলগ্ন মাটিয়ারি আর কাননপাড়া গ্রামে শিয়ালের উপদ্রব শুরু হয়েছে ৷ আসলে জগন্নাথপুরে ভালুকা ফরেস্টে প্রচুর শিয়াল রয়েছে ৷ ঠান্ডায় সময় শিয়ালের পাল গ্রামে চলে আসে ৷ আমি শিয়ালের হামলায় আহত 13 জনের বাড়ি গিয়েছি ৷ আমি তাঁদের আশ্বস্ত করেছি ৷ বিষয়টি আমি ডিএফওকে জানিয়েছি ৷ এনিয়ে বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করব ৷”