মালদা, 18 জুন: পুরাতন মালদায় শ্যুট-আউটের ঘটনায় চারজনকেই পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজত দিল জেলা আদালত ৷ যাদের মধ্যে একজনকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৷ আর সোমবার গ্রেফতার করা হয় আরও তিনজনকে ৷ সোমবার একজনকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছিল আদালত ৷ এদিন বাকি তিনজনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক সেই নির্দেশ দেন ৷
শুক্রবার গভীর রাতে পুরাতন মালদা পৌরসভার 17 নম্বর ওয়ার্ডে মুদি ব্যবসায়ীর সুমন সাহার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা ৷ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় একদল জমি মাফিয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ৷ সাড়ে তিন বিঘা ওই জমিতে 20-25 বছর ধরে বসবাস করছে 30-35টি পরিবার ৷ জমির রেকর্ডও বাড়ির মালিকদের নামে রয়েছে ৷ তারপরও গত বছর কালীপুজোর সময় থেকে ওই জমিতে বসবাসকারী মানুষজনকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে মাফিয়ারা ৷ 23 ফেব্রুয়ারি সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা সেখানে বাড়িঘর ভাঙচুর করে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় ৷ এক সপ্তাহের মধ্যে জমি খালি না করলে খুন করার হুমকি দিয়ে যায় ৷ ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুমনবাবু ৷ তাতেই তিনি দুষ্কৃতীদের রোষানলে পড়েন ৷ সেই ঘটনায় মালদা থানায় বেশ কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি ৷ তাতেই স্থানীয়রা অনুমান করেন, দুষ্কৃতীরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট ৷ তাই পুলিশ এমন নীরব ভূমিকা নিয়েছে ৷
গত শুক্রবার দুষ্কৃতীরা সুমনবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি ৷ তারা ঘরের ভিতর ঢুকে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরও করে ৷ সেই সময় সুমনবাবুর স্ত্রী রাখিদেবী দুই দুষ্কৃতীকে চিনে ফেলেন ৷ তাঁর চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় ৷ সুমনবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিক্যালে ৷ গুলি তাঁর পা ঘেঁষে চলে গিয়েছিল ৷ পরদিন রাখিদেবী মালদা থানায় কয়েকজন দুষ্কৃতীর নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ তারা সবাই স্থানীয় ছাতিয়ান মোড় এলাকার ৷
শেষ পর্যন্ত গত পরশু রাতে সাফল্য পায় পুলিশ ৷ নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় রতুয়ার গাবুয়া গ্রামের লিটন মণ্ডলকে ৷ গতকাল জেলা আদালতের সম্মতিক্রমে তাকে পাঁচদিনের হেফজতে নিয়েই জেরা শুরু করেন মালদা থানার পুলিশ আধিকারিকরা ৷ বেরিয়ে আসে আরও কয়েকটি নাম ৷ সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় ছাতিয়ান মোড়ের মনোজ মণ্ডল ও প্রকাশ দাস এবং পুখুরিয়া থানার মাদিয়াঘাট এলাকার শেখ আমিরকে ৷ পুলিশি জেরায় চারজনই নিজেদের দুষ্কর্মের কথা স্বীকার করেছে ৷
এই বিষয়ে মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে আর্মস অ্যাক্ট-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত জারি রয়েছে ৷ যদিও ধৃতদের দাবি, শুধুমাত্র সন্দেহের বশে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ভয় দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে৷