কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর: আরজি কর মামলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যুক্ত করার দাবি তুললেন প্রাক্তন বিচারপতি ৷ শনিবার শ্যামবাজারে 'আমরা আক্রান্তে'র মঞ্চে এমনটাই দাবি করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ৷
তিনি মনে করেন, আরজি কর মামলায় তথ্য প্রমাণ লোপাট হয়েছে ৷ নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে । সেটা আইনত অপরাধ ৷ তাই, এই মামলায় সঠিক বিচার করতে গেলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন ৷
ঘটনায় পুুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধি প্রশ্ন উঠেছে। নির্যাতিতার পরিবার দাবি করেছে, পুলিশ তাদের টাকা দিতে চেয়েছিল। তাছাডা় প্রাথমিক পর্বে যেভাবে পুলিশ তদন্ত করছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের 'অসঙ্গতি' পুলিশ মন্ত্রীর অগোচরে ঘটেছে বলে বিশ্বাস করেন না প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁর কথায়, "আর জি কর মামলায় যে তথ্য প্রমাণ লোপাট হয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু জানেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না ৷ এই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হলে অবশ্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে ৷ তাঁকে মামলার যুক্ত করার জন্য সকলকে আওয়াজ তুলতে হবে ৷"
শুধু তাই নয়, আরজি কর মামলায় ঘটনার পরম্পরা ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করেও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি ৷ তাঁর প্রশ্ন, কী করে এফআইআরের আগে দেহ সৎকার করা হল ? তাছাড়া মেয়ের ফোনে তিনবার নির্যাতিতার পরিবারকে আলাদা আলাদা তথ্য হাসপাাতালের তরফে কেন দেওয়া হল তাও জানা দরকার বলে মনে করেন তিনি ৷
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির প্রসঙ্গ তুলেও কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তিনি কড়া আইন চেয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন ৷ সেই চিঠির কোনও জবাব পাননি বলে বড় বড় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন ৷ চিঠির জবাব তিনি পেয়েছেন ৷ যেখানে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা তথা ধর্ষণের মামলার বিষয়ে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের কী ভূমিকা, তা স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে ৷"
বছর বারো আগে হওয়া মুখ্যমন্ত্রীর একটি কার্টুন অন্যদের পাঠিয়ে অভিযুক্ত হন অম্বিকেশন মহাপাত্র। একটি কার্টুন শেয়ার করে গ্রেফতার হওয়ায় তাঁকে ঘিরে তুমুল চর্চা হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন প্রতিবাদে তাঁকে দেখা যায়। এদিন তিনি বলেন, "কামদুনি কাণ্ডের বিচার হয়নি, তপন দত্ত খুনের বিচার হয়নি। আনিস খান খুনের বিচার হয়নি ৷ আরজি কর মামলায় যেন সেরকমটা না ঘটে, তার জন্যই আমাদের এই পথে নামা ৷"
মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের দিদি পূর্ণিমা রায় বিশ্বাসও এদিনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ৷ তিনি বলেন, "ঘটনাটি রাস্তায় ঘটেনি বা অন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় ঘটেনি ৷ হাসপাতালের ভিতর কর্তব্যরত অবস্থায় একজন চিকিৎসক ধর্ষিত হলেন, খুন হলেন ৷ এর জন্য জবাব দিতে হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ কারণ তিনি পুলিশ মন্ত্রী, তিনিই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৷" কবি মন্দাক্রান্ত সেন বলেন, "রাজ্যে একের পর এক নির্মম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে ৷ সঠিক বিচারের দাবিতে পথ পথে নামা হয়েছে আন্দোলন জারি রাখতে হবেই ৷"