মালদা, 26 সেপ্টেম্বর: কিছুটা হলেও স্বস্তি ৷ জলস্তর কমতে শুরু করেছে জেলার প্রধান দুই নদীর ৷ কিন্তু এখনও জেলা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত ৷ সমস্যা আরও বাড়িয়েছে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ৷ স্লুইস গেটের উপর থেকে জলের চাপ কমাতে খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যারেজের 109টি গেটই ৷ গেট খোলা জলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ অংশ ৷ ফুলহরের জল ঢুকে গিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের কিছু অংশেও ৷ মানিকচক ব্লকেও বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি ৷ পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷
বুধবার সকাল পর্যন্ত গঙ্গা ও ফুলহরের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল ৷ তবে সন্ধে থেকে জলস্তর নামতে শুরু করে দুই নদীরই ৷ বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গার জলস্তর ছিল 24.35 মিটার ৷ ফুলহর বইছে 27.25 মিটার উচ্চতায় ৷ জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "উত্তর ভারত থেকে গঙ্গার জল নেমে আসার পরিমাণ কমেছে ৷ ফলে গতকাল থেকে কমতে শুরু করেছে গঙ্গার জলস্তর ৷ একই কারণে কমছে ফুলহরের জলও ৷"
ফরাক্কা ব্যারেজের 109টি স্লুইস গেটই খুলে দেওয়ায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর, বাখরাবাদ ও পারদেওনাপুর শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৷ ইতিমধ্যে এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার নিচু জায়গাগুলি জলের তলায় চলে গিয়েছে ৷ পারদেওনাপুর শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারলালপুর ও পারশিবপুর ঘাট থেকে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ঘাট পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বিডিও সুকান্ত শিকদারের কথায়, "গঙ্গার জলের দিকে নজর রেখে নিরাপত্তার স্বার্থে ফেরি পরিষেবা আপাতত বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ দুই ফেরিঘাটের নৌকা মালিক সমিতিকে সেই নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷"
এ দিকে কয়েকদিন টানা জলস্তর বাড়তে থাকায় ফুলহরের জল হরিশ্চন্দ্রপুরের 2 নম্বর ব্লকের ইসলামপুর ও দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে ৷ ইসলামপুর পঞ্চায়েতের রশিদপুর, মিরপাড়া, তাঁতিপাড়া, কাউয়াডোল, উত্তর ও দক্ষিণ ভাকুরিয়া গ্রামের বেশিরভাগ অংশ বানভাসি ৷ জল ঢুকেছে দৌলতনগর পঞ্চায়েতের গোবরাহাটেও ৷ রশিদপুর প্রাথমিক স্কুলে জল ঢুকে পড়ায় পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷
কাউয়াডোল গ্রামের নিবারণ সাহা জানাচ্ছেন, "কয়েকদিন ধরে টানা জল বাড়ার পর গতকাল থেকে কমতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু গোটা গ্রাম এখন জলের তলায় ৷ এই জল কবে নামবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে ৷ তবে ফুলহরের জল সামান্য কমলেও ফের বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ আমরা আতঙ্কে রয়েছি ৷" হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও তাপস পাল জানিয়েছেন, "পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে ৷ দুর্গতদের সবরকম সাহায্য করতে ব্লক প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে ৷"
মানিকচক ব্লকের ভূতনি চর এবং গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্যা পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন নেই ৷ মঙ্গল ও বুধবার ভূতনিতে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আরও দুই শিশুর ৷ মঙ্গলবার দক্ষিণ চণ্ডীপুরের গুমানিটোলার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়াঁর 13 মাসের ছেলে ইরফাজ সবার অলক্ষ্যে হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠোনে নেমে যায় ৷ এই মুহূর্তে ইউসুফ সাহেবের বাড়ির উঠোনে এক গলা জল ৷ সেই জলে ডুবে মারা যায় ইরফাজ ৷ বুধবার উত্তর চণ্ডীপুরের ভীমটোলাতেও বন্যার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আরেকটি বাচ্চার ৷ নাম চন্দ্রভানু মণ্ডল ৷ বয়স দু'বছর ৷ দুটি দেহই ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়েছে ভূতনি থানার পুলিশ ৷ এ নিয়ে ভূতনিতে বন্যার শিকার হল সাতটি প্রাণ ৷
এই মুহূর্তে ভূতনি চরের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাই সম্পূর্ণ জলমগ্ন ৷ নদীর জল ঢুকে পড়ায় ভূতনি দিয়ারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ দক্ষিণ চণ্ডীপুর বাঁধে অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ৷ গর্ভবতীদের মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ মানিকচক ব্লকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী বলেন, "পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ৷ দুর্গত এলাকার মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে ৷ এই সময় শিশুদের সবসময় চোখে চোখে রাখার আবেদনও জানানো হচ্ছে ৷"
জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ তিনি জানান, "গতকাল আমি নিজেও কিছু দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি ৷ কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের দুটি গ্রামেও গঙ্গার জল ঢুকতে শুরু করেছে ৷ পরিস্থিতি মোবাকিলায় প্রশাসন তৈরি রয়েছে ৷ তবে সৌভাগ্যের বিষয়, জেলার দুই প্রধান নদীর জলই কমতে শুরু করেছে ৷ আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির উন্নতি হবে ৷"