কলকাতা, 14 নভেম্বর: এতদিন খাঁচায় বন্দি থাকত পশু-পাখি ৷ আর মুক্ত অবস্থায় তার বাইরে ঘুরে বেড়াত মানুষ ৷ এবার তারই বদল ঘটতে চলেছে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৷
- ভাবছেন রহস্যটা কী !
তাহলে খোলসা করেই বলা যাক ৷ এর আগে যা কখনও ঘটেনি আলিপুর চিড়িয়াখানায় তথা এ রাজ্যে, এবার সেটাই হতে চলেছে ৷ দর্শকরা ঢুকতে পারবেন খাঁচার ভিতর । দেড়শো বছরে প্রথম এমন উদ্যোগ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের ।
- পাখিরা ঘোরাফেরা করবে আশপাশে
আলিপুর চিড়িয়াখানার স্বর্ণময়ী হাউজের পাশে নতুন করে এনক্লোজার তৈরি করা হয়েছে । বিশালাকার কাঁচে মোড়া খাঁচায় দর্শকরা ঢুকতে পারবেন । 200 মিটারের বেশি লম্বা পথে ঘোরাফেরা করতে পারবেন যে কেউ । সেখানে বাঘ বা সিংহ নয়, রাখা হবে নানা প্রজাতির পাখি । খুব কাছ থেকেই পাখির সঙ্গে তুলতে পারবেন ছবি ও ভিডিয়ো, এমনকী সেলফিও ।
- কবে থেকে চালু হবে এই ব্যবস্থা ?
জাঁকিয়ে শীত পড়ার আগেই দর্শকদের জন্য নতুন চমক নিয়ে আসছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ । জানা গিয়েছে, শুক্রবারের মধ্যে কাজ শেষ হবে ৷ এরপর আগামী সপ্তাহ থেকে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই নয়া ব্যবস্থা ৷ যেখানে এতদিন বিদেশে ও দেশের অন্যান্য রাজ্যে এনক্লোজারের ভিতর থেকে পশু-পাখিদের দেখা যেত ৷ এবার সেই ব্যবস্থাই চালু হচ্ছে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৷
এই নয়া উদ্যোগের কথা শুনে উৎসাহিত দর্শকরা ৷ তেমনই দর্শকদের এই সুযোগ করে দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও । ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, "দেড়শো বছর পূর্তিতে আলিপুর চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে । প্রবেশ পথে নতুন গেটের উদ্বোধন করা হয়েছে । কিছুদিনের মধ্যে খাঁচায় প্রবেশ করতে পারবেন দর্শকরা । পাখিদের জন্য একটি নতুন খাঁচা তৈরি হয়েছে । তবে, ছুঁতে পারবেন না । কাঁচে মোড়া খাঁচার ভিতরে পাখিদের সঙ্গে ছবি তুলতে পারবেন ।"
- কত রকমের পাখি থাকবে এই খাচার ভিতরে?
শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, "মাটি থেকে যত উঁচু খাচা তৈরি করা হয়েছে, তার বিভিন্ন লেয়ার অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রাখা হবে । প্রাথমিকভাবে, 10-12 প্রজাতির পাখি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । জলজ পাখিও থাকবে । একারণেই খাঁচার মধ্যে রয়েছে জলাশয় । কোনও পাখি হয়তো দর্শকের মাথার উপরেও থাকবে ।"
- শুধুই কি পাখির খাঁচাতে ঢুকতে পারবেন দর্শকরা? ভবিষ্যতে বাঘ ও সিংহের মত হিংস্র পশুর খাঁচায় ঢুকতে পারার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে কি?
হেসে আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর বলেন, "আপাতত এরকম কোনও পরিকল্পনা নেই । কারণ চিড়িয়াখানায় এ ধরনের উদ্যোগ নিতে গেলে যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন, তা আমাদের নেই । ফলে পাখির খাঁচাতে ঢুকতে পারা এবং পাখির সঙ্গে সেলফি তোলার আনন্দের মধ্যেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে ।"
শীতের মরশুমে প্রতিবারই নতুন অতিথির আগমন ঘটে আলিপুর চিড়িয়াখানায় । 150 বছর পূর্তি উপলক্ষে এবং শীতের মরশুমের শুরুতে বেশ কয়েকজন নতুন অতিথি আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিরেক্টর । প্রাথমিকভাবে, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি থেকে লেপার্ড ক্যাট আনার চেষ্টা চলছে ।
আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই লেপার্ড ক্যাট প্রথমবার আলিপুরে আসছে এমনটা নয়, কয়েক দশক আগেও এই লেপার্ড ক্যাট আলিপুর চিড়িয়াখানায় ছিল । এছাড়াও, পুজোর আগে একগুচ্ছ অতিথি এসেছে আলিপুরে ।
ওড়িশার নন্দনকানন থেকে বাঘ, সিংহ, হিমালয়ান ভল্লুক, জলহস্তী, মাউজ ডিয়ার, সোয়াম্প ডিয়াররা আসে । একজোড়া রয়্যাল বেঙ্গল ও টাপির এসেছিল বেঙ্গল সাফারি থেকে । সাদা বাঘিনীকে নিয়ে আসা হয়েছিল অন্ধপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে । এবার লেপার্ড ক্যাট স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আলিপুর কর্তৃপক্ষ ।