কলকাতা, 10 অগস্ট: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তারির পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টানলেন রাজ্য়ের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পারব না ইউপির মতো এনকাউন্টার করতে ।’’
শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে ৷ সেই ঘটনায় সঞ্জয় দাস নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ সেই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়েই উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনেছেন ফিরহাদ হাকিম ৷
কলকাতার মেয়র বলেন, ‘‘কামদুনিতে যেমন প্রত্যেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এখানেও শক্ত হাতে তদন্ত করতে হবে । যারা এরকম পৈশাচিককাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করবে পুলিশ । অন্য রাজ্যের তুলনায় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ এই ধরনের ঘটনায় তদন্ত খুব দ্রুত করে । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আছে, যারা 30 বছর ধরে তদন্ত করে যায় বিভিন্ন কেসে । আমার মনে হয় দোষীদের আদালত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে ।’’
এর পরেই তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা তো আর পারব না ইউপির মতো হাতে হ্যান্ডকাফ দিয়ে প্রকাশ্যে এনকাউন্টার করে মেরে দিতে । সভ্য সমাজে সেটা হয় না । আদালত কঠোর শাস্তির নিদান দেবে বলেই আশা রাখছি ।’’
চিকিৎসক মৃত্যুতে অভিযুক্তর 14 দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ
উল্লেখ্য, 2017 সালের পর থেকে উত্তরপ্রদেশে একাধিক অভিযুক্ত এনকাউন্টারে মারা গিয়েছেন ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের হাত থেকে পালাতে গিয়েই তাঁরা নিহত হন ৷ ওই রাজ্যে এখন বিজেপির সরকার ৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ৷ বিজেপি বিরোধীরা বরাবর এই এনকাউন্টারগুলিকে ভুয়ো বলে অভিযোগ করে ৷ ফলে এ দিন ফিরহাদ যা বলেছেন, তা ওই অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই ৷
এদিকে আরজি করের এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার থেকেই উত্তাল পুরো কলকাতা । শনিবার এই ঘটনার রেশ শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাবানলের মতো ছড়িয়েছে ৷ ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলনও শুরু হয়েছে । শহরের বাকি হাসপাতালগুলোয় কার্যত জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কোনও বিভাগে কাজ করছেন না ডাক্তারি পড়ুয়ারা । ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা ।
পাশাপাশি রাস্তার নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে বাম থেকে বিজেপি সব বিরোধী রাজনৈতিক দল । প্রতিবাদ ক্ষোভ বিক্ষোভ ঠেকাতে কলকাতা পুলিশের কালঘাম ঝরছে । এই পরিস্থিতিতে কলকাতার মহানাগরিকের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ বিজেপি নেতা এবং কলকাতা পুরনিগমের কাউন্সিলর সজল ঘোষ কলকাতার মেয়রের মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন ৷
তিনি বলেন, ‘‘মেয়র অপারগ যখন রাজ্যে মহিলা নির্যাতন হয়, আক্রান্ত হন অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে । উনি কর্পোরেশন চালাতে পারেন না ৷ উনি কী করে অপরাধীদের ধরে ইউপির মতো এনকাউন্টার করবেন । ওঁর নেত্রী বলছেন সিবিআই তদন্তে কোনও সমস্যা নেই ৷ তার মানে কিছু লুকোনোর নেই । তাহলে কামদুনি বা অন্য ক্ষেত্রে লুকোনোর চেষ্টা করেন কেন ? সেখানে কি যুক্ত আছেন প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে !’’
সজল ঘোষ আরও বলেন, ‘‘আজ সারা রাজ্য উত্তাল হওয়ার কথা ছিল । বুদ্ধিজীবীরা কোথায় ? যারা মোমবাতি নিয়ে নামতেন । মোমবাতি আজ খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা ?’’