মালদা, 22 এপ্রিল: রান্নাঘর থেকে ছড়ানো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল অন্তত 12টি বাড়ি ৷ সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিছাপা গ্রামে ৷ আগুনে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলি ৷ সব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নীচে তাঁরা ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিডিও তাপস পাল, চাঁচলের মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেনও ৷
হাতিছাপা গ্রামে ফুলহর নদীর বাঁধের পাশে পূর্ত দফতরের জমিতে গড়ে উঠেছে নদী ভাঙন উদ্বাস্তুদের কলোনি ৷ ভাঙনে সব হারিয়ে এখানে অস্থায়ী বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন বহু মানুষ ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে আগুন লাগে ৷ একে শুকনো মরশুম, তার উপর নদীর দমকা হাওয়ায় নিমেষের মধ্যে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িতে ৷ আগুনের প্রকোপ এতটাই বেশি ছিল যে কেউ ঘর থেকে কিছু বের করতে পারেননি ৷
স্থানীয়রা নদীর জল নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ৷ খবর পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে ঘটনাস্থলে আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন ৷ প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকল কর্মীরা ৷ কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাড়িগুলির যাবতীয় সামগ্রী ৷ বাঁচানো যায়নি টাকা-পয়সা, সোনাদানাও ৷ জানা যাচ্ছে, আগুনে ক্ষতির পরিমাণ 20 লাখ টাকার বেশি ৷
স্থানীয় বাসিন্দা রহমতুল্লা বলছেন, “আমাদের ধারণা, কোনও বাড়ির রান্নাঘর থেকেই আগুন ছড়িয়েছে ৷ সব মিলিয়ে 20 লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ৷ এরা সব পরিযায়ী শ্রমিক ৷ বাইরে কাজ করে সংসার চালায় ৷ কেউ মেয়ের বিয়ে, কেউ ছেলের বিয়ে দেবে বলে বাড়িতে টাকা মজুত করেছিল ৷ সব ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ সোনাদানা থেকে শুরু করে দানাপানিও অবশিষ্ট নেই ৷ সব হারিয়ে এরা বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে ৷ প্রশাসনের লোকজন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে ৷ প্রশাসনের কাছে দাবি, এই পরিবারগুলিকে যাবতীয় সাহায্য করা হোক ৷”
আগুনে পুড়ে গিয়েছে জমানো 60-70 হাজার টাকা ৷ সেই শোক ভুলতে পারছেন না মানজারা খাতুন ৷ চোখের জলে জানালেন, “সকালে ছেলেটা চা খেতে চেয়েছিল ৷ চা বসিয়ে রুটি বানানোর জন্য আটা নিতে গিয়েছিলাম ৷ হঠাৎ দেখি, ধাঁ ধাঁ করে আগুন জ্বলছে ৷ মুহূর্তের মধ্যে গোটা বাড়িতে আগুন ধরে গেল ৷ কিছু বাঁচাতে পারিনি ৷ 60-70 হাজার টাকা ছিল ৷ সব শেষ ৷ আমার কাছে আর কিছু নেই ৷ সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি ৷”
এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ ওসমান গনি বলেন, “এরা সব গরিব মানুষ ৷ সবাই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ সকালে শুনলাম, ভুট্টার অবশিষ্ট দিয়ে রান্না করার সময় আগুনে এদের সব পুড়ে গিয়েছে ৷ অন্তত 20 লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে ৷ বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন ও দলের সবাইকে জানাই ৷ জানাই আমাদের দলের মন্ত্রী তজমুল হোসেনকেও ৷ সবাই ঘটনাস্থলে আসছেন ৷ আমরা চাইছি, এই নিঃস্ব মানুষগুলিকে সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী যেন সমস্ত সাহায্য করেন ৷”
আরও পড়ুন: