মালদা, 22 অগস্ট: আগেই প্রশ্ন উঠেছিল ৷ মৃতদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলেন সকলেই ৷ কিন্তু মুর্শিদাবাদে মৃত মালদার ফার্মাসি ছাত্রের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সেসবের উল্লেখই নেই ! ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে শুধু বলা হয়েছে, শ্বাসরোধের কারণে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে ৷ মৃত ছাত্রের পরিবার-সহ গ্রামবাসীদের দাবি, রাজনৈতিক চাপে সঠিকভাবে মৃতদেহের ময়নাতদন্তই হয়নি ৷ ছেলের মৃতদেহের ফের ময়নাতদন্তের দাবিতে বৃহস্পতিবার মালদা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ছাত্রের বাবা ৷ জেলাশাসককে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন মা ৷
মৃত ছাত্রের নাম তহিদ করিম ৷ বাড়ি ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি গ্রামে ৷ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত মিয়াঁপুরে জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের 'জাকির হোসেন ইন্সটিটিউট অফ ফার্মাসি'তে পড়াশোনা করত সে ৷ 13 অগস্ট এই কলেজেরই হস্টেল থেকে উদ্ধার হয় তহিদের দেহ ৷ খবর পেয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ ৷ কিন্তু অদ্ভুত বিষয়, তহিদের মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পরও অভিভাবকদের সেই খবর দেয়নি পুলিশ কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷ ফলে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, শাসকদলের বিধায়কের চাপে কি কিছু গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে ?
অনেক টালবাহানার পর অবশেষে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ গতকাল তহিদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট তাঁর অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় ৷ সেই রিপোর্টে খুন নয়, আত্মহত্যারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ৷ সেই রিপোর্ট বিশ্বাস করতে নারাজ তহিদের বাবা রেজাউল করিম ৷ এখন তিনি ছেলের ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে ৷ তবে সেই রিপোর্ট আসার আগেই এদিন তিনি মালদার জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন ৷ জেলাশাসকের অবর্তমানে দেখা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অনিন্দ্য সরকারের সঙ্গে ৷ নিজেদের আবেদনপত্র তুলে দেন প্রশাসনিক কর্তার হাতে ৷
জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে রেজাউল সাহেব জানান, “জাকির হোসেন ইন্সটিটিউট অফ ফার্মাসিতে আমার ছেলে খুনই হয়েছে ৷ আজ আমি অতিরিক্ত জেলাশাসককে সেকথা জানিয়েছি ৷ ছেলের মৃতদেহে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল ৷ তাই আমি রঘুনাথগঞ্জ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু ওই থানার পুলিশ আমার অভিযোগপত্র জমা নেয়নি ৷ বাধ্য হয়ে আমি ইংরেজবাজার থানায় জিরো এফআইআর করি ৷ সেই অভিযোগপত্র ট্রান্সফার হলে তা জমা নিতে বাধ্য হয় রঘুনাথগঞ্জ থানা ৷ তারা খুনের মামলাও রুজু করে ৷ এখনও পর্যন্ত সেভাবে কোনও তদন্ত করেনি ৷ কাউকে গ্রেফতারও করেনি ৷ এই পরিস্থিতিতে আজ আমরা মালদার অতিরিক্ত জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ তাঁকে জানিয়েছি, আমার ছেলের খুনিদের গ্রেফতার না করা হলে হয় আমরা গোটা পরিবার আত্মহত্যা করব, নইলে বড়সড় আন্দোলনে নামব ৷"
তাঁর কথায়, "তৃণমূলের বিধায়কের ইন্সটিটিউট বলেই হয়তো রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ৷ আমরা এই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিশ্বাস করি না ৷ আমরা চাই, মালদা জেলা প্রশাসন ফের ছেলের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করুক ৷ আমরা ছেলের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করাতে চাই ৷”