কলকাতা: দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিচয়। আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়ে স্বজন হারানোর দুঃখ অনুভব করছি ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণ আমার কাছে এক কথায় অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি অস্বাভাবিক স্নেহ করতেন আমাকে। তিনি না থাকলে হয়তো আমার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়াই হতো না। লোকমুখে শুনেছি উনিই আমার নাম এই পদে সুপারিশ করেছিলেন।
এমনি তো তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ চলবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বুদ্ধদেবের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। আমার জীবনের অনেক কিছুর পিছনে বুদ্ধবাবুর একটা অবদান আছে যা অনস্বীকার্য। আজকে তাঁর প্রয়াণকে আমার ব্যক্তিগত শোক হিসাবেই আমি দেখছি। বুদ্ধবাবু কবি ছিলেন। কবিতার একনিষ্ঠ পাঠকও ছিলেন। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছিলেন, কাজেই তাঁর চরিত্রে একটা বহুমাত্রিকতাও ছিল। রাজনীতি করতে করতেও সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৷ গণতান্ত্রিক শিল্প সংঘের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে আমি দেখেছি তাঁর সময়ে লোকসংস্কৃতির একটা জাগরণ ঘটেছিল।
এটা 69 থেকে 79-এর মধ্যের ঘটনা বলছি। আমি এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এছাড়া, সাহিত্যে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার-এর পিছনেও বুদ্ধবাবুর অবদান ছিল। এমনকী, জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে সব ধরনের সাংস্কৃতিক বিষয়ে পরামর্শ বুদ্ধবাবুই দিতেন, যতদূর আমি জানি। সে ক্ষেত্রে আজ তাঁর চলে যাওয়া অবশ্যই একটা অপূরণীয় ক্ষতি।
ব্যক্তিগত জীবনে বুদ্ধবাবু আমাকে খুবই ভালবাসতেন। নানা কাজে আমাকে ডেকেও নিতেন। এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের প্রস্তাব বুদ্ধবাবুর কাছ থেকেই এসেছিল আমার কাছে । 2004-2005 সালে আমার শিকাগো ডক্টরেট নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সে সময় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল, একইভাবে বুদ্ধবাবুও আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অতএব, এই ব্যক্তিগত ঋণ কখনওই অস্বীকার করা যাবে না।
রাজনৈতিক বিবেচনায় বুদ্ধবাবু অন্য মাপের মানুষ ছিলেন। অন্য ধরনের রাজনীতিক ছিলেন তিনি ৷ স্বপ্নদর্শী ছিলেন। ভদ্র মানুষ ছিলেন। এই ভদ্রতার জন্যই হয়তো অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেননি। কিন্তু, এরকম মার্জিত রুচিশীল সংস্কৃতিমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী আমরা আর পাব বলে মনে হয় না।