দেগঙ্গা, 30 জুলাই: রেশন দুর্নীতি মামলায় এবার ইডির আতসকাচের নীচে তৃণমূল ব্লক সভাপতির কোটি কোটি টাকার গাড়ি! রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ চালকল মালিক বাকিবুর রহমানের আত্মীয় তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান ওরফে 'বিদেশে'র বাড়ির গ্যারাজেই ছিল বিলাসবহুল গাড়ির সম্ভার। যা দেখে মঙ্গলবার কার্যত চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে যাওয়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের।
এদিন দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায় রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে যায় ইডির তদন্তকারী দল। সেখানে পিজি হাইটেক রাইস মিল নামে একটি চালকলে হানা দেন তারা। এই রাইস মিলের মালিক আবার দেগঙ্গা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আনিসুর রহমানের দাদা মুকুল রহমান। অভিযোগ, বকলমে এই রাইস মিলের পার্টনারশিপও রয়েছে ওই তৃণমূল নেতার। মিলের পাশেই তৃণমূল নেতার সাজানো গোছানো সাদা রংয়ের দোতলা বাড়ি। সেই বাড়ির নীচেই রয়েছে গ্যারাজ। যেখানে সারি সারি দাঁড়িয়ে একের পর এক নামী-দামি বিদেশি গাড়ি। যেগুলির এক একটির দাম কমপক্ষে কোটি টাকা বলেই জানা গিয়েছে।
- এই গাড়ির সম্ভার ঘিরেই রহস্যদানা বেঁধেছে ইডির তদন্তকারীদের মনে। প্রশ্ন উঠেছে, রেশন দুর্নীতির টাকায় কী কোনওভাবে কেনা হয়েছে এই সমস্ত নামীদামি গাড়ি? গাড়ির কেনার টাকাই বা আসল কোথা থেকে? এর খরচ মেটানো হল কীভাবে? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছে ইডি। সেই কারণে তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে এই মুহূর্তে বাড়ির ভিতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা, এমনটাই খবর ইডি সূত্রে ৷
যদিও, ওই নেতার ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করেছেন, তিনি তাঁর রোজগারের টাকা থেকেই এই সমস্ত গাড়ি কিনেছেন। তাই, এর সঙ্গে রেশন দুর্নীতির কোনও যোগ নেই। সবটাই মিথ্যা ৷ অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতার পরিবারের সদস্যরা।
- এদিকে, আরও একটি বিষয় নজরে এসেছে ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের। তাহল- তৃণমূল নেতার বাড়ির গায়েই আবার রয়েছে দেগঙ্গা 1 নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়। যেখান থেকে আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ দলের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন বলেই খবর।
আরও একটি বিষয় লক্ষ করা গিয়েছে, এদিন দেগঙ্গার যে রাইস মিলে তল্লাশি চলছে, তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর ট্রাক। তাতে লেখা 'অন ডিউটি গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ফুড সাপ্লায়ার্স'। রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের সঙ্গে এই রাইস মিলের যোগের একটা সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে । রাইস মিলের কর্মীরা বলছেন, "এখান থেকে চাল যায় সরকারি গোডাউনে।" ফলে মঙ্গলের এই অভিযান যে বড় মোড় নিতে চলেছে, এখনও পর্যন্ত তেমনটাই সঙ্কেত মিলছে।"
অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা আনিসুরের বাড়ির গ্যারাজে এদিন 6টি এসইউভি গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। এর মধ্যে যেমন রয়েছে আলকাজার, টয়োটা, ফরচুনার মতো দামী গাড়ি। তেমনই রয়েছে মিৎসুবিসি, পাজেরো, হুন্ডাই, মারুতি, সুজুকি জেনের মতো বিদেশি গাড়িও। সবথেকে বড় লক্ষণীয় বিষয়, টয়োটা, ফরচুনার গাড়ির নেমপ্লেটে জ্বলজ্বল করছে আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশের নাম।
সবমিলিয়ে, পিজি হাইটেক রাইস মিলের মালিক মুকুল ও আনিসুর রহমানের গ্যারাজে রাখা গাড়ির সম্ভারের সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগ অথবা এই রাইস মিলের মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না, সেটাই এখন খতিয়ে দেখছেন ইডির আধিকারিকরা।