জলপাইগুড়ি/মেদিনীপুর: মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হাতির হানায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের মৃত্যুর পর এবার তটস্থ বনবিভাগ । জলপাইগুড়ির জঙ্গল সংলগ্ন রাস্তায় যাতে কোনও ভাবেই বন্যপ্রাণী না বেরোয়, সেই কারণে চলল টহলদারি ৷ একই ছবি ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে ৷ ঐরাবত গাড়ির প্রহরার সঙ্গে মাইকিং এবং হুলাপার্টিদের সতর্কতায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা নিরাপদে পৌঁছল পরীক্ষাকেন্দ্রে ৷
এ দিন, জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বনবিভাগের গাড়িতে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ গতবছর জলপাইগুড়ির মহারাজ ঘাট এলাকায় বৈকুন্ঠপুর হাতির হানায় মাধ্যমিকের ছাত্রের মৃত্যু হয়। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলা-সহ জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের বনবিভাগের গাড়িতে ও বাড়তি গাড়ি দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । জেলায় 10টি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস-সহ বনবিভাগের ও পুলিশের গাড়িতেও পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয় ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয় ৷ সাতসকালে পরীক্ষার্থীদের জন্য ই-রিক্সা নিয়ে পৌঁছে যান গ্রিন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী সনেকা রায়। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতেই ফ্রি ই-রিক্সা পরিষেবা দেওয়া হয় । জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকে কুকুরযান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে সদর ব্লকের বাহাদুর ঠুটা পাকুরি হাইস্কুলে l গ্রিন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যা সনেকা রায় তাদের 9 কিমি বিনামূল্যে ই-রিক্সা পরিষেবা দেন । এ দিন ছাত্রদের হাতে কলমও তুলে দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার 15টি বিধানসভার মধ্যে শালবনি, গড়বেতা, চাঁদড়া, ধেড়ুয়ার কিছুটা অংশ হাতি উপদ্রুত এলাকা । তাই আগেই বৈঠক সেরেছেন জেলাশাসক ও বন আধিকারিকরা । সেই নির্দেশ মতো এ দিন ভোর থেকেই চলল প্রহরা । মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর গাড়িগুলোকে এসকর্ট করে প্রহরার মধ্যে নিয়ে গেল ঐরাবত গাড়ি । এরই সঙ্গে এলাকায় এলাকায় চলে মাইকিং ৷ প্রহরার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে রাত পর্যন্ত যতক্ষণ না পরীক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে ৷ এই প্রহরা শুধু মাধ্যমিক নয়, উচ্চ মাধ্যমিকেও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বনদফতরের কর্মীরা ৷
উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম, রূপনারায়ণপুর, মেদিনীপুর এবং খড়গপুর ডিভিশনের অধীনে জঙ্গলে প্রায় 100টি হাতি রয়েছে ৷ পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সব রকম আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । সকাল 5টা থেকে পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা বাড়ি না পৌঁছনো পর্যন্ত পেট্রলিং করেন বনকর্মীরা । জঙ্গলের ভেতরে শর্ট রুট যাতে ব্যবহার না করে সেজন্য সতর্ক করা হয় প্রচারের মাধ্যমে। জঙ্গলের ভেতরে শর্টরুটে ড্রপ গেট করা হয় । এরইসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলায় এআই (AI) ক্যামেরার মাধ্যমে হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখেন বন দফতরের কর্মীরা । কোন এলাকায় কতগুলি হাতি রয়েছে তা আগাম জানিয়ে দেওয়া হয় বাল্ক মেসেজের মাধ্যমে ।
আরও পড়ুন:
1. ফের মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ মালদায়, শোরগোল সোশাল মিডিয়ায়
2. স্কুলের ব্যবস্থা করে দেওয়া গাড়িতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পড়ুয়ারা, পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানালেন নগরপাল
3. আতঙ্ক কাটিয়ে শুরু পরীক্ষা, কড়া নিরাপত্তা নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরে