বোলপুর, 3 অক্টোবর: শতাব্দী প্রাচীন প্রথা ও বেলজিয়ামের ঝাড়বাতির সজ্জা-সহ বৃহৎ সুসজ্জিত অট্টালিকা বোলপুরের সুরুল জমিদারবাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ । সুরুল সরকার বাড়ির এই পুজো 290 বছরে পা দিল ৷ জমিদার ভরতচন্দ্র ঘোষের ছেলে কৃষ্ণহরি সরকার এই পুজোর সূচনা করেছিলেন ।
এখনও 300 বছরের পুরনো গহনা দিয়ে পরিবারের লোকজন প্রতিমাকে সাজান। আজ থেকে 128 বছর আগে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদের জেরে জমিদার বাড়ির পাশেই আরেকটি পুজোর সূচনা হয়েছিল ৷ সেটিকে সুরুল ছোট বাড়ির পুজো বলা হয় ৷
তবে দুটি পুজোর প্রথা একই । প্রতি বছর একই গড়নের প্রতিমা নির্মাণ হয় ৷ বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিমার মুখ ছাঁচে নয় হাতে করে নির্মাণ করা হয় ৷ চার পুরুষ ধরে বীরভূমের খয়রাশোলের বাসিন্দা সুভাষ সূত্রধর দুই জমিদার বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন ৷ 300 বছরের পুরনো গহনা দিয়ে সরকার পরিবারের সদস্যরা প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলেন ৷ দোলায় করে ঘট ভরার প্রথা রয়েছে ৷ এছাড়াও চালকুমড়ো, আখ ও ছাগ বলিদান করা হয় ৷
বর্ধমান জেলার নীলপুর গ্রাম থেকে বীরভূমের বোলপুরের সুরুল গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ভরতচন্দ্র ঘোষ ('সরকার' পদবি ব্রিটিশ প্রদত্ত)। তাঁকে সরকার বাড়ির প্রাণ পুরুষ বলা হত ৷ তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় জমিদারিত্ব । ভরতচন্দ্র ঘোষের পুত্র কৃষ্ণহরি সরকার জমিদারবাড়ির অন্দরেই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন ৷ তখন মাটির তৈরি মন্দির ছিল ৷ পরে কংক্রিটের মন্দির, সুসজ্জিত নাটমন্দির তৈরি হয় ৷
তবে আজও চিরাচরিত জমিদারী প্রথা মেনেই পুজো হয় ৷ এই জমিদার বাড়ির পুজোর মূল আকর্ষণ হল বৃহৎ অট্টালিকা ৷ বড় বড় থাম, ঐতিহ্যবাহী জানালা-দরজা, সিংহদুয়ার দেখার মতো । এছাড়া, পুজোর সময় পুরনো বড় বড় বেলজিয়ামের ঝাড়বাতি দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয় ৷
সুরুল সরকার বাড়ির সদস্য শরদিন্দু সরকার বলেন, "আমাদের পুজো বৈষ্ণব মতে হয় ৷ কিন্তু বলি প্রথা আছে ৷ আগে এই মন্দির মাটির ছিল । পরে কংক্রিটের নাটমন্দির তৈরি হয় ৷ পুজোর চারদিন সরকার পরিবারের সকলে যে যেখানেই থাকেন বাড়িতে আসেন ৷ আমাদের পুজোর প্রথা প্রথম দিন থেকে আজও একই ।"