বারাসত, 23 অক্টোবর: বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা ৷ ঘূর্ণিঝড় দানা ক্রমশ ধেয়ে আসছে ওড়িশা-বাংলার উপকূলে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উত্তর 24 পরগনা জেলায় ৷ তাও আবার কালীপুজোর সময় ৷ আর তাতেই চিন্তা বাড়িয়েছে বারাসতের বড় বাজেটের পুজো কমিটিগুলির ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কায় রীতিমতো ঘুম উড়েছে তাঁদের।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে অথবা শুক্রবার ভোরে ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশা-বাংলার উপকূলবর্তী এলাকায়। যার প্রভাবে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। তালিকায় রয়েছে উত্তর 24 পরগনা জেলাও। এর জেরেই তৈরি হয়েছে আশঙ্কার কালো মেঘ। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দানা'র মোকাবিলা করা, অন্যদিকে, প্যান্ডেলের কাজ যথাসময়ে সম্পূর্ণ করাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে। তাই, তড়িঘড়ি মণ্ডপসজ্জার কাজ সেরে নিতে চাইছেন বারাসতের বড় পুজো কমিটিগুলি। কোনও কোনও পুজো উদ্যোক্তা আবার বন্ধ রাখছেন মণ্ডপের কাজ।
কালীপুজোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসতের নাম। অনেকে একে কালীপুজোর শহরও বলে থাকেন। এর নেপথ্যে রয়েছে বারাসতে বিগ বাজেটের পুজো প্যান্ডেল। দর্শনার্থীদের পছন্দের তালিকাতেও সবার উপরে রয়েছে বারাসতের নাম। পাশাপাশি মধ্যমগ্রাম এবং নৈহাটির কালীপুজোও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে, ভীরের মাপকাঠিতে বারাসতের ধারেকাছে নেই কোনও পুজো কমিটিই ৷ এখানকার বড় পুজোগুলোর মধ্যে রয়েছে নবপল্লীর আমরা সবাই ক্লাব। এছাড়া, পায়োনিয়র পার্ক, শতদল সঙ্ঘ, বিদ্রোহী ক্লাব, বারাসত ব্যায়াম সমিতি, কেএনসি রেজিমেন্ট, সন্ধানী ক্লাব বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পুজোমণ্ডপে শুধু থিমের চমক নয়, আলোকসজ্জাতেও নজর কাড়ে বারাসতের কালীপুজো।
কিন্তু, আশঙ্কার কালো মেঘ কালীপুজোর আকাশে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, সোমবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ক্ষেত্রটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে কিছুটা সরে এসে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার খুব ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি পুরী, পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপারার উপর দিয়ে বয়ে যাবে। যার প্রভাবে উপকূলবর্তী উত্তর 24 পরগনা জেলা-সহ বেশকিছু জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। তারপর থেকে মাথায় হাত পড়েছে কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের। বেশিরভাগ পুজোমণ্ডপ এখন মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে। ঝড়–বৃষ্টির দুর্যোগ থাকবে আগামী দু-তিন দিন। পুজো উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ চাইছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগেই মণ্ডপসজ্জার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে। আবার কোনও পুজো উদ্যোক্তা মণ্ডপ বাঁচাতে বেশকিছু উদ্যোগও নিতে চলেছে। যাতে মণ্ডপের কাজে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। দুর্যোগ কেটে গেলে নতুন করে কাজ শুরু করতে চান তাঁরা।
এই বিষয়ে বারাসত নবপল্লী 'আমরা সবাই' পুজো কমিটির সম্পাদক তথা পুর পারিষদ অরুণ ভৌমিক বলেন, "এবছর আমরা দর্শনার্থীদের কৈলাস ও মানস সরোবর উপহার দিতে চলেছি। পুজো মণ্ডপের কাজ আমরা দু'মাস আগেই শুরু করেছি। পুজোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। তা সত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাঘাত ঘটাতে পারে মণ্ডপসজ্জার কাজে। তাই, মণ্ডপের বাইরে কাজ যতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই আমরা করছি। বাকিটা তো সব মায়ের হাতে। মা নিশ্চিয় এই দুর্যোগের হাত থেকে সকলকে রক্ষা করবেন।"
একই সুর শোনা গিয়েছে বারাসতের বিদ্রোহী ক্লাবের সম্পাদক মানিক দত্ত এবং শতদল সঙ্ঘের সম্পাদক সুজিত সাহার গলাতেও। দু'জনেই জানান, প্রশাসন যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছে সেভাবেই তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে যাতে মণ্ডপের কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকেও নজর দিয়েছে তারা ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মেনে নিতে হবে। সেখানে কারও হাত নেই। সবমিলিয়ে, ঘূর্ণিঝড় দানা'র হাত থেকে মণ্ডপসজ্জা রক্ষা করতে শ্যামা মা-ই এখন ভরসা পুজো উদ্যোক্তাদের।