ETV Bharat / state

কলকাতা মেডিক্যালে 'এলিয়েন হ্যান্ড', নতুন বছরে 'হাত উপহার' পেলেন রোগী - ALIEN HAND IN KOLKATA MEDICAL

ভেলোর থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল সর্বত্র ঘুরলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে 'হাত উপহার' পেলেন 35 বছরের এক মহিলা ৷

ALIEN HAND IN KOLKATA MEDICAL
কলকাতা মেডিক্যালে 'এলিয়েন হ্যান্ড' (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 2, 2025, 4:08 PM IST

কলকাতা, 2 জানুয়ারি: জেমস ক্যামেরনের তৈরি সিনেমা 'অবতার'। সেই সিনেমায় এলিয়েনদের হাতে ছিল চারটে আঙুল। সেই চারটে আঙুলকে নিয়েই তারা অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এবার আর রিল নয়, রিয়েল লাইফে ঘটল এই ঘটনা। পাঁচটা আঙুলের বদলে চারটে ! তাই নিয়ে বাকি জীবন এগিয়ে নিয়ে যাবেন বসিরহাটের কৌশল্যা বাছা। নতুন বছরে নিজের হাতই রোগিনীকে উপহার দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। তবে সেই হাতেই রয়েছে মজা। কারণ তার হাতে পাঁচটা নয়, রয়েছে চারটে আঙুল। যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় 'এলিয়েন হ্যান্ড'।

গত শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসেন 35 বছরের এক মহিলা। ভেলোর থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল সর্বত্র ঘুরলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাঁর ডান হাতের তর্জনীতে এটি বড় টিউমার ছিল। অস্ত্রপচার করা হয়েছে তিনবার। কিন্তু ফল মেলেনি। উপরন্তু সবাই তাঁকে বলেছেন, হাত কেটে বাদ দেওয়ার কথা। সব শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু সেখানেই হল 'মিরাকেল'। জরুরি অবস্থায় ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের চিকিৎসকরা।

কলকাতা মেডিক্যালে 'এলিয়েন হ্যান্ড' (ইটিভি ভারত)

অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তথা সহকারি অধ্যাপক সৈকত শাহু বলেন, "এখানে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল একটাই। যখনই উনি হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে আমাকে টিউমারটা দেখাতে যাচ্ছেন তখনই রক্ত বের হচ্ছিল। সেখান থেকে বাঁচানোর একটাই উপায় ছিল হাত কেটে বাদ দেওয়া। কিন্তু উনি হাত কেটে বাদ দেওয়াতে রাজি ছিলেন না। তাই আমরা তখন প্লাস্টিক সার্জারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওইদিন রাতেই জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ফলে ওই রোগীর তর্জনীটি বাদ গিয়েছে। কিন্তু তাঁর হাতে কোনও বদল হয়নি ৷"

এই বিষয়ে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তথা অধ্যাপক প্রবীর যশ বলেন, "ওই রোগীর টিউমার ছিল বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীর মাঝের জায়গায়। মূলত এক্ষেত্রে আমাদের হাতটা বাদ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে চ্যালেঞ্জ ছিল হাতটাকে ঠিক রাখা। সেক্ষেত্রে আমরা টিউমারটি বাদ দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র তর্জনী বাদ দিয়েছি। আর ওই মাঝের জায়গাটা পূর্ণ করার জন্য তর্জনীর যে চামড়া ছিল সেটা ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত এ সমস্ত ক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে চামড়া নিয়ে ওই ফাঁকা জায়গা পূরণ করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। এর ফলে হাতের মতোই দেখতে তাঁর হাত আবার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।" তাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন চিকিৎসক তথা সহকারি অধ্যাপক দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়।

এই অস্ত্রোপচার করতে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হত প্রায় 15 থেকে 20 লক্ষ টাকা। কারণ সূক্ষ্ম থেকে অতিসূক্ষ্ম যে শিরা-উপশিরাগুলি রয়েছে তা একটি দামি যন্ত্র দিয়ে আটকানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা হওয়ায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের হাত ফিরে পেলেন বসিরহাটের কৌশল্যা। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, "সাত বছর ধরে আমার হাতে এই টিউমার। ভেলোর, আমার বাড়ির কাছে একটি হাসপাতাল এবং সবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেছি, কিন্তু ফল মেলেনি। এখানকার চিকিৎসকরা আমার হাত ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন আর কোনও সমস্যা হচ্ছে না। অল্প যন্ত্রণা করছিল এখন সেটাও নেই। এখন আমি ভালো আছি।"

কলকাতা, 2 জানুয়ারি: জেমস ক্যামেরনের তৈরি সিনেমা 'অবতার'। সেই সিনেমায় এলিয়েনদের হাতে ছিল চারটে আঙুল। সেই চারটে আঙুলকে নিয়েই তারা অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এবার আর রিল নয়, রিয়েল লাইফে ঘটল এই ঘটনা। পাঁচটা আঙুলের বদলে চারটে ! তাই নিয়ে বাকি জীবন এগিয়ে নিয়ে যাবেন বসিরহাটের কৌশল্যা বাছা। নতুন বছরে নিজের হাতই রোগিনীকে উপহার দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। তবে সেই হাতেই রয়েছে মজা। কারণ তার হাতে পাঁচটা নয়, রয়েছে চারটে আঙুল। যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় 'এলিয়েন হ্যান্ড'।

গত শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসেন 35 বছরের এক মহিলা। ভেলোর থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল সর্বত্র ঘুরলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাঁর ডান হাতের তর্জনীতে এটি বড় টিউমার ছিল। অস্ত্রপচার করা হয়েছে তিনবার। কিন্তু ফল মেলেনি। উপরন্তু সবাই তাঁকে বলেছেন, হাত কেটে বাদ দেওয়ার কথা। সব শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু সেখানেই হল 'মিরাকেল'। জরুরি অবস্থায় ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের চিকিৎসকরা।

কলকাতা মেডিক্যালে 'এলিয়েন হ্যান্ড' (ইটিভি ভারত)

অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তথা সহকারি অধ্যাপক সৈকত শাহু বলেন, "এখানে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল একটাই। যখনই উনি হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে আমাকে টিউমারটা দেখাতে যাচ্ছেন তখনই রক্ত বের হচ্ছিল। সেখান থেকে বাঁচানোর একটাই উপায় ছিল হাত কেটে বাদ দেওয়া। কিন্তু উনি হাত কেটে বাদ দেওয়াতে রাজি ছিলেন না। তাই আমরা তখন প্লাস্টিক সার্জারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওইদিন রাতেই জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ফলে ওই রোগীর তর্জনীটি বাদ গিয়েছে। কিন্তু তাঁর হাতে কোনও বদল হয়নি ৷"

এই বিষয়ে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তথা অধ্যাপক প্রবীর যশ বলেন, "ওই রোগীর টিউমার ছিল বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীর মাঝের জায়গায়। মূলত এক্ষেত্রে আমাদের হাতটা বাদ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে চ্যালেঞ্জ ছিল হাতটাকে ঠিক রাখা। সেক্ষেত্রে আমরা টিউমারটি বাদ দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র তর্জনী বাদ দিয়েছি। আর ওই মাঝের জায়গাটা পূর্ণ করার জন্য তর্জনীর যে চামড়া ছিল সেটা ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত এ সমস্ত ক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে চামড়া নিয়ে ওই ফাঁকা জায়গা পূরণ করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। এর ফলে হাতের মতোই দেখতে তাঁর হাত আবার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।" তাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন চিকিৎসক তথা সহকারি অধ্যাপক দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়।

এই অস্ত্রোপচার করতে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হত প্রায় 15 থেকে 20 লক্ষ টাকা। কারণ সূক্ষ্ম থেকে অতিসূক্ষ্ম যে শিরা-উপশিরাগুলি রয়েছে তা একটি দামি যন্ত্র দিয়ে আটকানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা হওয়ায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের হাত ফিরে পেলেন বসিরহাটের কৌশল্যা। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, "সাত বছর ধরে আমার হাতে এই টিউমার। ভেলোর, আমার বাড়ির কাছে একটি হাসপাতাল এবং সবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেছি, কিন্তু ফল মেলেনি। এখানকার চিকিৎসকরা আমার হাত ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন আর কোনও সমস্যা হচ্ছে না। অল্প যন্ত্রণা করছিল এখন সেটাও নেই। এখন আমি ভালো আছি।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.