কলকাতা, 14 অক্টোবর: চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠকে কাটল না অচলাবস্থা ৷ চিকিৎসকদের তরফে এই বৈঠককে নিস্ফলা বলে দাবি করা হয়েছে ৷ অন্যদিকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, ডাক্তারদের দাবি নিয়ে সরকারের মনোভাব ইতিবাচক ৷ ফলে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন-আন্দোলনের শেষ কোথায়, তা ধোঁয়াশা রয়েই গেল ৷
সোমবার ডাক্তারদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ৷ ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীও । তবে ছিলেন না স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম ৷
আড়াই ঘন্টার বেশি সময় ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক চলে । কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়ে ডাক্তার সংগঠনগুলির তরফ থেকে জানানো হয় রফাসূত্র অধরা । ফলে অচলাবস্থা কাটাতে এদিনের বৈঠক সফল হয়নি বলে জানিয়ে দিয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলো ।
অন্যদিকে এ দিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, ‘‘যে দশদফা দাবি নিয়ে ডাক্তার সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছিল, তার সাতটি দাবি ইতিমধ্যেই নয় পূরণ হয়েছে অথবা কাজ চলছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তিনটে দাবি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে । তবে যেহেতু বেশিরভাগ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে সেটাকে ইতিবাচক বিবেচনা করে জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন প্রত্যাহার করুক ।’’ তবে দাবিপূরণে কোনও টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব ৷ এ দিন মুখ্য সচিব জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে নতুন করে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলছে না রাজ্য প্রশাসন । তবে রাজ্য প্রশাসন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন । তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করুন, সেটাই চায় সরকার ।
মনোজ পন্থ বলেন, ‘‘আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দু’দিন আগে বৈঠকে বসেছিলাম । ইমেলের মাধ্যমেও তাঁদের অনুরোধ করেছি । ওঁদের স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন । আমরা চাইছি ওঁরা দ্রুত তাদের অনশন প্রত্যাহার করে নিক । এবং কাজে ফিরে আসুক । আমরা কখনোই চাই না জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন চালিয়ে যাক । আমরা ওদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছি । আমরা অনুরোধ করছি, যাতে ওরা এই অনশন প্রত্যাহার করে নেয় ।’’
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে কি আন্দোলন তোলার পথ বন্ধ হয়ে গেল। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে গোটা বিষয়কে সমাধানের চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাব। তবে এটাও আশা করব। সরকারের তরফ থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। সেটাকে মাথায় রেখেই ওরা অনশন থেকে সরে আসুক।’’ পাশাপাশি তিনি দুর্গাপুজোর কার্নিভালের দিন ডাক্তারদের তরফ থেকে যে দ্রোহের কার্নিভালের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তার থেকে সরে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে এ দিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে সিনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে বলা হয়েছে মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা হতাশ । ড. তমোনাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম যে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং আমাদের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা নিশ্চয় জুনিয়র ডাক্তারদের কথা ভেবে এমন পদক্ষেপ করবেন, যাতে একটা সমাধান সূত্র পাওয়া যাবে । আমরা ভেবেছিলাম সরকারের একটা সদর্থক ভূমিকা আমরা দেখতে পাব ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম, জুনিয়র ডাক্তারদের বিষয়ে ভাবিত নন তাঁরা । আমরা ভেবেছিলাম সরকার কোনও নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ কাজ করতে পারবেন, তা আমাদের নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন, তা কিন্তু মুখ্যসচিবের থেকে পাওয়া গেল না ।’’
আরেক চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র জানান, জুনিয়র ডাক্তাররা দশ দিন ধরে অনশন করছেন, তাঁদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন । এবার হয়তো সদর্থক একটা উত্তর পাওয়া যাবে বলেই বৈঠকে আসা । সরকার একটা লিখিত আশ্বাস দেবে, যেটা নিয়ে হয়তো জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে গিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা বলা যাবে ৷ মুখ্যসচিব তেমন কিছুই করলেন না । এর থেকে এটাই মনে হচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সরকার ভাবিত নয় ।
ড. উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেহেতু আজকের বৈঠকটা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা ডেকেছিলেন, আমরা ভেবেছিলাম হয়তো একটা ইতিবাচক সদুত্তর পাওয়া যাবে । কিন্তু মিটিং থেকে বেরিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এটাই বলতে পারি আমরা হতাশ ।’’