আসানসোল, 15 নভেম্বর: রাজ্যে ট্যাব কেলেঙ্কারি, রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে অর্জুন সিংয়ের খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, থ্রেট কালচারে ঝাড়গ্রামের আবাসিক চিকিৎসকের রহস্যময় মৃত্যুর অভিযোগ - আসানসোলে এমনই একাধিক বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন দিলীপ ঘোষ । আসানসোলে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এসে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে উপনির্বাচনে দলের ভালো ফলাফল হবে বলেও দাবি করেছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি ৷
শুক্রবার আসানসোলে এসে বিভিন্ন জায়গায় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অংশ নেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ । শুক্রবার সকালে আসানসোলের মুর্গাসোল মোড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিজেপি নেতা প্রশান্ত চক্রবর্তী, বিজেপির জেলার সম্পাদক অভিজিৎ রায়-সহ প্রমুখরা । এদিন বহু মানুষকে দেখা যায় মোবাইলের সাহায্যে বিজেপির সদস্যপত্র নিতে । স্থানীয় ইস্যু থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এদিন রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন দিলীপ ঘোষ ।
উপনির্বাচনের ফল নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমরা লড়াই করেছি । আশা করছি মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন । ভালো ফল হবে । দুটো বিধানসভাতে তো আমাদের বসতেই দেওয়া হয়নি, তবু আশা করছি ফল ভালো হবে ।"
রাজ্য জুড়ে এখন জ্বলন্ত ইস্যু ট্যাব কেলেঙ্কারি । আর এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, "কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারি । কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই, গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েদের লোভ দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেছিলেন, ট্যাব দেওয়া হবে । তারা কিনতে পারে না বলেই সে দিকে তাকিয়ে ছিল । প্রথমে বলা হল, ট্যাব নয় দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে । পরে বলা হল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে । টাকা চলেও গেল । অথচ যারা টাকা পাওয়ার তারা পেল না । টিএমসি নেতারা পেয়ে গেল । আমফানের সময়ও আপনারা দেখেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার এক হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছিল । দু'দিনেই টাকা গায়েব । টিএমসি নেতাদের পকেটে ঢুকে গেল টাকা । টাকা যে দেয় সেও জানতে পারে না, কে পায় সেও জানতে পারে না । মাঝখানে টাকা গায়েব হয়ে যায় । এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চমৎকার ।"
বৃহস্পতিবারই অর্জুন সিং বিস্ফোরক অভিযোগ এনে বলেছিলেন, তাঁকে রাশিয়া থেকে আনা রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে শাসকদল । এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "আমাদের বিরোধীদের অন্যান্য নেতারা টার্গেট হবে এটা স্বাভাবিক । এই সরকার তার পার্টির নেতাদেরই সুরক্ষা দিতে পারে না । আর অর্জুন সিং এমন একটা জায়গায় আছেন যেখানে রোজ বোমা-বন্দুক চলে । আর তাঁকেই বারবার দায়ী করা হয় । তৃণমূলে থাকলেও তিনি দোষী । বিজেপিতে থাকলেও তিনিই দোষী । আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সামলাতে পারছেন না । ইউপি, বিহারে যত দুষ্কৃতীকারী আছে সবাই এই রাজ্যে চলে এসেছে । আগে ভিন রাজ্যে বোমা-বন্দুকের কারখানা হত । এখন পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় হচ্ছে ।"
আরজি করের নির্যাতিতার মৃত্যুর 100 দিন হতে চলল ৷ সেই বিচার নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, "বিচারের দায়িত্ব নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । বিচার তার কাছেই চাইতে হবে । 100 দিন, 200 দিন, আমরা দিন গুনতে চাই না । আমরা দেখতে চাই সুবিচার পেয়েছে তাঁর পরিবার । সাজা পেয়েছে তাঁর দোষীরা । মানুষের আশা যেন পূর্ণ হয় এবং আইনশৃঙ্খলার প্রতি মানুষের যেন আস্থা থাকে সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ।"
ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে । তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হচ্ছে । আর এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, "আরজি করে এই ধরনের রহস্যময় মৃত্যু অনেক হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালগুলি থ্রেট কালচারের আখড়া হয়ে গিয়েছে । কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটিগুলোতেও তাই চলছে । আমরা বিরোধীরা সবসময় থ্রেটের মধ্যেই থাকি । সিপিএমের সময়ও একই চিত্র ছিল । গুন্ডারা এই পার্টির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে । যতদিন এই সরকার থাকবে ততদিন থ্রেট কালচার থাকবে ।"