ডায়মন্ড হারবার, 28 মে: একসময়ের লালদুর্গ হিসেবে পরিচিত ডায়মন্ড হারবারে 2009 সাল থেকে একছত্র আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আজ ধারে ও ভারে এটাই রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট আসন ৷ গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতা শাসকদলের নাম্বার টু তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবার হ্যাটট্রিকের অপেক্ষায় ৷
ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, 1967 সাল থেকে ডায়মন্ড হারবার আসনে সিপিআইএম-এর ছিল একচেটিয়া দখলদারি ৷ জ্যোতির্ময় বসু পরপর চারবার, তারপর তিনবার অমল দত্ত এবং সবশেষে শমীক লাহিড়ী টানা চারবার সাংসদ হয়েছেন এই কেন্দ্র থেকে ৷ পরিবর্তনের হাওয়ায় পাশা বদলায় 2009 সালে ৷ বিদায়ী সাংসদকে পরাজিত করে ডায়মন্ড হারবারের কুর্সিতে বসেন তৃণমূল কংগ্রেসের সোমেন মিত্র ৷ এরপর 2014 সালে এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন অভিষেক ৷ তার পরের লোকসভায় অর্থাৎ 2019 সালে জয়ের মার্জিনটা বিপুল বাড়িয়ে নেন তিনি ৷
2019 সালে অভিষেক পেয়েছিলেন 7,90,000 ভোট ৷ তবে সে বার এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থান থেকে বামেদের সরিয়ে জায়গা করে নেয় বিজেপি ৷ যদিও পদ্মশিবিরের নীলাঞ্জন রায় অভিষেকের থেকে অনেক পেছনে ছিলেন ৷ তিনি পান 4,70,533টি ভোট ৷ তৃতীয় স্থানে থাকা সিপিআইএম-এর প্রার্থী ফুয়াদ হালিম পান 93,941টি ভোট ৷
"দশ বছর ধরে ডায়মন্ড হারবারে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই ৷ মানুষ এখানে ভোট দিতে পারেনি ৷ তৃণমূল বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোনও কথা বলেন, তাহলে রাতে তাঁর বাড়িতে পুলিশ যাবে, নয়তো তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে হুমকি দেবে ৷ তারই বিরুদ্ধে আমাদের প্রচার ৷ এই কেন্দ্রে অনেক কল-কারখানা ছিল ৷ একটার পর একটা কারখানা ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে ৷ আর একটা বড় সমস্যা হল পানীয় জলের ৷ স্বাধীনতার এত বছর পরও মানুষ পানীয় জল পাচ্ছে না ৷ লোকে বলা শুরু করেছে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের যে জলের কোম্পানি রয়েছে, তাদের জল বিক্রির কারণেই এলাকার মানুষ জল পাচ্ছেন না ৷ এগুলোর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই ৷ আমাদের মূল লক্ষ্য, রোটি, কাপড়া, মকান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ৷ অবাধ ও স্বচ্ছ ভোট হলে এ বার ইভিএম খুললে গল্প আছে," বলেন প্রতিকুর।
অপরদিকে, আইএসএফ প্রার্থী মজনু লস্করের দাবি, তাঁর মতো সদ্য রাজনীতিতে আসা প্রার্থীর উপরও হামলা চালাচ্ছে শাসকদল ৷ তিনি বলেন, "এখানে আমরা 100 শতাংশ জিতব ৷ দলের একটা পরিকল্পনা আছে আর ব্যক্তি হিসেবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে ৷ ডায়মন্ডহারবারে একটা স্পেশাল ইকনমিক জোন আছে ফলতাতে ৷ সেখানে এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড একটা সেন্টার করেছিল কেন্দ্র ৷ প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল ৷ এখানকার মানুষদের কর্মসংস্থানের জন্য ৷ সেই কর্মসংস্থান আজ শূন্যতে পরিণত হয়েছে ৷ কত কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এখানে আবার কলকারখানা তৈরি করে কর্মসংস্থান তৈরি করে দেশের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে আমার প্রথম কাজ ৷ বেকারত্ব দূর করাই হবে আমার মূল লক্ষ্য ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টকেও মানছেন না ৷ তিনি একজন স্বেচ্ছাচারী হিটলারে পরিণত হয়েছেন ৷ "
বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাসও অভিষেকের বিরদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, "এখানে প্রচুর খতরনাক এলাকা আছে, যেখানে রোজ আমাদের কর্মীরা ঘরছাড়া হচ্ছেন ৷ মারধর করছে অভিষেকের গুন্ডাবাহিনী ৷ এ বারের নির্বাচন তৃণমূল বা সিপিআইএম-এর বিরুদ্ধে নয় ৷ এ বার একটাই কথা - ভাইরাস হঠাও, ডায়মন্ড হারবার বাঁচাও ৷ অভিষেক তো নাকি এত বড় ডন, ওকে বলুন নির্দল হয়ে দাঁড়াতে ৷"
তবে বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তিনি সবসময় এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "আমি ডায়মন্ড হারবারে কিছুই বুঝতে দিইনি ৷ যে যে জেলায় বিজেপি আছে সেখানে দেখুন কিছুই পায়নি ৷ এখানে আমি আছি, তাই কিছু করতে পারেনি ৷ আমি সারাবছর মানুষের জন্য কাজ করি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনেক কিছু চাই ৷ তিনি কখনও মানা করেননি ৷ আমি যতদিন বেঁচে আছি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করতে দেব না ৷" বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "ওদের ভোটের এজেন্ট বসানোর লোক নেই ৷ 5 হাজার, 10 হাজার টাকা দিয়ে এজেন্ট বসাচ্ছে ৷ একটা প্রার্থী খুঁজতে ওদের এক মাস লেগে গেল ৷ বুঝতেই পারছেন এদের অবস্থা ৷"
অভিষেকের বডি ল্যাঙ্গোয়েজে মনে হচ্ছে তিনি যেন ওয়াকওভার পেয়ে গিয়েছেন ৷ তবে লড়াইটা যে সহজ হবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিরোধী প্রার্থীরা ৷ হেভিওয়েট এই আসনের কুর্সি অবশেষে কার দখলে যায়, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে 4 জুন পর্যন্ত ৷