ETV Bharat / state

রক্তরঞ্জিত খড়গ ও ছিন্নমস্তক হাতের কালীকে ভক্ত স্মার্টফোনে শোনান আকুল প্রার্থনা

ভক্তদের কাছে তিনি বড়মা হিসেবেই পরিচিত ৷ সেই বড়মাকেই ভালোবেসে ফোন, ব্যাগ ও ঘড়ি দিয়েছেন ভক্তরা ৷ যোগাযোগ করতে মায়ের নম্বরে ফোনও করেন ৷ কোথায় রয়েছেন এমন দেবী ?

Birhata Kalibari
বীরহাটা কালীবাড়ির অষ্টধাতুর মাতৃমূর্তি (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 2 hours ago

বর্ধমান, 22 অক্টোবর: দিগম্বরী বা বিবসনা মা কালী, যাঁর নামের অন্য অর্থে নিহিত আছে সময় বা যিনি কালের পূর্ণতার রূপ হিসেবে পূজিতা; তাঁরই খড়গ-সহ চার হাতের মধ্যে যে হাতের মুঠোয় ধরা অসুরের ছিন্ন মস্তক, সেই হাতের কব্জিতে বাঁধা একটি স্মার্ট ওয়াচ ! যেন থমকে আছে কালের অমোঘ মুহূর্ত । সেই হাতেই আবার শোভা পাচ্ছে বিবর্তনের অন্যতম আবিষ্কার, একটি স্মার্টফোন । আর এই স্মার্টফোন এবং স্মার্ট ওয়াচ-এর সঙ্গে সেই হাতেই ঝুলছে রাঙা ভ্যানিটি ব্যাগ । নবসাজে সজ্জিতা এই অভূতপূর্ব কালীমূর্তি দেখতে আপনাকে আসতে হবে বর্ধমানের কার্জন গেটের কাছে বীরহাটার মন্দিরে ।

জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বীরহাটা কালীবাড়ির পুজো ৷ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকাল সেভাবে জানা না গেলেও এই পুজো বহু প্রাচীনকালের বলে শোনা যায় ৷ জনশ্রুতি আছে, এই দেবী ডাকাতকালী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন ৷ জানা যায়, জিটি রোডে পিচ রাস্তা তৈরি করার সময় বাঁকা নদীর তীরবর্তী এলাকায় যখন জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটি কাটার কাজ চলছিল সেই সময় এই কালীমায়ের বেদী ছিল ৷

বীরহাটা কালীবাড়ির মায়ের হাতে স্মার্টফোন, ব্যাগ ও ঘড়ি; দেখুন ভিডিয়ো (ইটিভি ভারত)

ইতিহাস বলছে, 1924 সাল নাগাদ বেশ কিছু ভক্তের সহযোগিতায় তাদের পরিবারের রান্নার চাল থেকে চাল বাঁচিয়ে একটা ভাঁড়ে জমাতে শুরু করেন । সেই চাল বিক্রি করে মন্দিরের সামনে একটা টিনের চালা তৈরি করা হয় । পরবর্তীকালে বীরহাটা, টাউনহল পাড়া, কালীবাজার, প্রতাপেশ্বর শিবতলা ও মুরাদ মহল্লা এই পাঁচটা এলাকার ব্যক্তিদের নিয়ে 'কালীবাড়ি সমিতি' গঠন করা হয় । এরপর 2001 সালে বীরহাটা কালী ট্রাস্ট গঠন করে পুজো পরিচালনা করা হয় ।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর ৷ এই প্রবচনই মিলিয়ে দিয়েছে ভক্ত ও ভগবানকে ৷ বিশ্বাসে ভর করেই ভক্তরা 'বড়মা'কে দিয়েছেন ফোন, ব্যাগ ও ঘড়ি ৷ ভক্তদের বিশ্বাস ভাঙতে দেননি বড়মা'র পূজারিও ৷ উপহারের স্মার্টফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও স্মার্টওয়াচ সযত্নে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ ফোন থেকে ঘড়ি সবই সচল ৷ ভক্তরা মাকে ফোনও করেন ৷ একটা সময় সেই ফোনের রিংটোন বাজত ৷ তবে পুজোর সময় বারবার ফোন বাজলে তাতে ব্যাঘাত ঘটে ৷ তাই বর্তমানে সেটি সাইলেন্ট করা থাকে ৷ এই বিষয়ে পুরোহিত জানান, ভক্তরা নিজেদের মনোস্কামনা পূরণের জন্য মাকে ফোন করেন ৷ মায়ের ফোনে রিং হয় এতেই তাদের মানসিক শান্তি ৷ তবে পুজোর সময় ক্রমাগত ফোন বাজতে থাকলে তাতো ভালো দেখায় না তাই এখন ফোন সাইলেন্ট করা থাকে ৷ তবে ফোন এখনও আসে শুধু আওয়াজ হয় না ৷ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি ৷

Birhata Kalibari
মায়ের হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ, স্মার্টফোন ও স্মার্ট ওয়াচ (ইটিভি ভারত)

আগে এখানে ছিল মাটির মূর্তি । সারাবছর পুজো আচ্চায় প্রতিমা নষ্ট হয়ে যেত ৷ তারপরই স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে 2004 সালে আট ফুটের অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় । জেলার মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ অষ্টধাতুর কালীমূর্তির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ ৷ তবে সেই সময় পশুবলি দেওয়া হত । পরে তা বন্ধ হয়ে যায় । এখন চালকুমড়ো বলি হয় ৷

মন্দিরের পুরোহিত আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, "মা তো সকলের মা । তিনি বড়মা নামেই পরিচিত । প্রত্যেকেই তাঁকে মা হিসেবে মনে করেন ৷ তাই কোনও কোনও ভক্ত মাকে স্মার্ট ফোন ও স্মার্ট ওয়াচ দিয়ে গিয়েছেন । তাকে মায়ের হাতেই দেওয়া আছে । অনেকে মায়ের ফোনে রিং করেন । এমনকি ফোনের চার্জ যাতে শেষ না হয়ে যায় সেই জন্য নিয়মিত চার্জ দেওয়া হয় । ভক্তদের বিশ্বাস মাকে ফোন করলে মা উত্তর দেন । এখানে নিত্য দু'বেলা মায়ের পুজো করা হয় এছাড়া প্রতি অমাবস্যা কিংবা বিশেষ তিথিতে পুজোর সময় প্রচুর মানুষের সমাগম হয় । আর কালীপুজোর দিন তো বিভিন্ন জেলার মানুষজন মায়ের পুজো দেখার জন্য ভিড় করেন । সারারাত ধরে চলে মায়ের পুজো ।"

Birhata Kalibari Bardhaman
বীরহাটা কালীবাড়ির মা (ইটিভি ভারত)

কীভাবে পৌঁছবেন বীরহাটা কালীবাড়ি:

  • বর্ধমান স্টেশনে নেমে টোটো পাওয়া যাবে । স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে জিটি রোড বরাবর আড়াই কিলোমিটার গেলেই মিলবে কার্জন গেট । সেখান থেকে ওই জিটি রোড ধরে আরও এক কিলোমিটার গেলেই পারবীরহাটা ব্রিজের আগে কালীবাজার মোড় । সেখান থেকে বাঁদিকে তাকালেই বীরহাটা কালীমন্দির ।
  • কলকাতা থেকে গাড়ি করে এলে বীরহাটা ব্রিজের ক্লক টাওয়ার পার করেই একশো মিটারের মধ্যে মিলবে কালীবাজার মোড় । সেই মোড়ের ডানদিকেই বীরহাটা কালীবাড়ি ।

বর্ধমান, 22 অক্টোবর: দিগম্বরী বা বিবসনা মা কালী, যাঁর নামের অন্য অর্থে নিহিত আছে সময় বা যিনি কালের পূর্ণতার রূপ হিসেবে পূজিতা; তাঁরই খড়গ-সহ চার হাতের মধ্যে যে হাতের মুঠোয় ধরা অসুরের ছিন্ন মস্তক, সেই হাতের কব্জিতে বাঁধা একটি স্মার্ট ওয়াচ ! যেন থমকে আছে কালের অমোঘ মুহূর্ত । সেই হাতেই আবার শোভা পাচ্ছে বিবর্তনের অন্যতম আবিষ্কার, একটি স্মার্টফোন । আর এই স্মার্টফোন এবং স্মার্ট ওয়াচ-এর সঙ্গে সেই হাতেই ঝুলছে রাঙা ভ্যানিটি ব্যাগ । নবসাজে সজ্জিতা এই অভূতপূর্ব কালীমূর্তি দেখতে আপনাকে আসতে হবে বর্ধমানের কার্জন গেটের কাছে বীরহাটার মন্দিরে ।

জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বীরহাটা কালীবাড়ির পুজো ৷ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকাল সেভাবে জানা না গেলেও এই পুজো বহু প্রাচীনকালের বলে শোনা যায় ৷ জনশ্রুতি আছে, এই দেবী ডাকাতকালী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন ৷ জানা যায়, জিটি রোডে পিচ রাস্তা তৈরি করার সময় বাঁকা নদীর তীরবর্তী এলাকায় যখন জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটি কাটার কাজ চলছিল সেই সময় এই কালীমায়ের বেদী ছিল ৷

বীরহাটা কালীবাড়ির মায়ের হাতে স্মার্টফোন, ব্যাগ ও ঘড়ি; দেখুন ভিডিয়ো (ইটিভি ভারত)

ইতিহাস বলছে, 1924 সাল নাগাদ বেশ কিছু ভক্তের সহযোগিতায় তাদের পরিবারের রান্নার চাল থেকে চাল বাঁচিয়ে একটা ভাঁড়ে জমাতে শুরু করেন । সেই চাল বিক্রি করে মন্দিরের সামনে একটা টিনের চালা তৈরি করা হয় । পরবর্তীকালে বীরহাটা, টাউনহল পাড়া, কালীবাজার, প্রতাপেশ্বর শিবতলা ও মুরাদ মহল্লা এই পাঁচটা এলাকার ব্যক্তিদের নিয়ে 'কালীবাড়ি সমিতি' গঠন করা হয় । এরপর 2001 সালে বীরহাটা কালী ট্রাস্ট গঠন করে পুজো পরিচালনা করা হয় ।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর ৷ এই প্রবচনই মিলিয়ে দিয়েছে ভক্ত ও ভগবানকে ৷ বিশ্বাসে ভর করেই ভক্তরা 'বড়মা'কে দিয়েছেন ফোন, ব্যাগ ও ঘড়ি ৷ ভক্তদের বিশ্বাস ভাঙতে দেননি বড়মা'র পূজারিও ৷ উপহারের স্মার্টফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও স্মার্টওয়াচ সযত্নে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ ফোন থেকে ঘড়ি সবই সচল ৷ ভক্তরা মাকে ফোনও করেন ৷ একটা সময় সেই ফোনের রিংটোন বাজত ৷ তবে পুজোর সময় বারবার ফোন বাজলে তাতে ব্যাঘাত ঘটে ৷ তাই বর্তমানে সেটি সাইলেন্ট করা থাকে ৷ এই বিষয়ে পুরোহিত জানান, ভক্তরা নিজেদের মনোস্কামনা পূরণের জন্য মাকে ফোন করেন ৷ মায়ের ফোনে রিং হয় এতেই তাদের মানসিক শান্তি ৷ তবে পুজোর সময় ক্রমাগত ফোন বাজতে থাকলে তাতো ভালো দেখায় না তাই এখন ফোন সাইলেন্ট করা থাকে ৷ তবে ফোন এখনও আসে শুধু আওয়াজ হয় না ৷ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি ৷

Birhata Kalibari
মায়ের হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ, স্মার্টফোন ও স্মার্ট ওয়াচ (ইটিভি ভারত)

আগে এখানে ছিল মাটির মূর্তি । সারাবছর পুজো আচ্চায় প্রতিমা নষ্ট হয়ে যেত ৷ তারপরই স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে 2004 সালে আট ফুটের অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় । জেলার মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ অষ্টধাতুর কালীমূর্তির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ ৷ তবে সেই সময় পশুবলি দেওয়া হত । পরে তা বন্ধ হয়ে যায় । এখন চালকুমড়ো বলি হয় ৷

মন্দিরের পুরোহিত আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, "মা তো সকলের মা । তিনি বড়মা নামেই পরিচিত । প্রত্যেকেই তাঁকে মা হিসেবে মনে করেন ৷ তাই কোনও কোনও ভক্ত মাকে স্মার্ট ফোন ও স্মার্ট ওয়াচ দিয়ে গিয়েছেন । তাকে মায়ের হাতেই দেওয়া আছে । অনেকে মায়ের ফোনে রিং করেন । এমনকি ফোনের চার্জ যাতে শেষ না হয়ে যায় সেই জন্য নিয়মিত চার্জ দেওয়া হয় । ভক্তদের বিশ্বাস মাকে ফোন করলে মা উত্তর দেন । এখানে নিত্য দু'বেলা মায়ের পুজো করা হয় এছাড়া প্রতি অমাবস্যা কিংবা বিশেষ তিথিতে পুজোর সময় প্রচুর মানুষের সমাগম হয় । আর কালীপুজোর দিন তো বিভিন্ন জেলার মানুষজন মায়ের পুজো দেখার জন্য ভিড় করেন । সারারাত ধরে চলে মায়ের পুজো ।"

Birhata Kalibari Bardhaman
বীরহাটা কালীবাড়ির মা (ইটিভি ভারত)

কীভাবে পৌঁছবেন বীরহাটা কালীবাড়ি:

  • বর্ধমান স্টেশনে নেমে টোটো পাওয়া যাবে । স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে জিটি রোড বরাবর আড়াই কিলোমিটার গেলেই মিলবে কার্জন গেট । সেখান থেকে ওই জিটি রোড ধরে আরও এক কিলোমিটার গেলেই পারবীরহাটা ব্রিজের আগে কালীবাজার মোড় । সেখান থেকে বাঁদিকে তাকালেই বীরহাটা কালীমন্দির ।
  • কলকাতা থেকে গাড়ি করে এলে বীরহাটা ব্রিজের ক্লক টাওয়ার পার করেই একশো মিটারের মধ্যে মিলবে কালীবাজার মোড় । সেই মোড়ের ডানদিকেই বীরহাটা কালীবাড়ি ।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.