কলকাতা ও হাওড়া, 26 অক্টোবর: দানার জেরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। দমদম বিমান বন্দর লাগোয়া এলাকাগুলিতে জমা জল বেরোতে পারছে না ৷ শনিবার সকাল থেকেই ভিআইপি রোড, হলদিরাম, চিনার পার্কের রাস্তাগুলির উপর হাঁটুসমান জল ৷ হাওড়া সদর ও হাওড়া গ্রামীণের সার্বিক চিত্রটাও মোটের উপর এক।
দানা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির ফলে হলদিরামের কাছে ভিআইপি রোডের উপর জল জমতে শুরু করে। বিধাননগর পুরসভার তরফ থেকে চেষ্টা করা হলেও এখনও জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলেনি স্থানীয়দের ৷ পাশাপাশি রাস্তায় জল জমার কারণে অফিস যাত্রীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে ৷ এছাড়াও হাওড়া সদর এলাকাগুলিতে পথঘাট জলের তলায়, গ্রামীণ এলাকাতেও চাষিদের সর্বস্বান্ত হওয়ার পরিস্থিতি। জলের তলায় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি ৷
হাওড়ায় জমা জল
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সেভাবে ক্ষয়ক্ষতি না-হলেও শুক্রবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া একনাগাড় বৃষ্টিতে হাওড়া পুরসভা এলাকার অধিকাংশ ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে উত্তর হাওড়ার নিচু ওয়ার্ডগুলিতে কার্যত হাঁটুর উপরে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ডুমুরজলার তাঁতিপাড়া এলাকায় জমা জলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পুরসভার এক সাফাইকর্মীর। মৃতের নাম গৌতম চট্টোপাধ্যায় (39)। এদিকে, শহরজুড়ে প্রচুর পাম্প চালিয়ে জমা জল বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে হাওড়া পুরসভা।
আবর্জনা ও বেহাল নিকাশির কারণে গত কয়েক মাস ধরেই হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমা কয়েকগুণ বেড়েছে। কয়েক পশলা বৃষ্টি হলেই তার প্রমাণ মেলে। এদিনের বৃষ্টিতে পঞ্চাননতলা রোড, বেলিলিয়াস রোড, বেনারস রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস-সহ টিকিয়াপাড়া, রামরাজাতলার মতো এলাকাগুলিতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে জনজীবন।
মমতার ক্ষোভ
কিন্তু বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কারণে জলবন্দি শহরের ছবিটা এদিন ছিল ভরা বর্ষার মতোই। হাওড়ার নিকাশি ও আবর্জনার সমস্যা নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষোভপ্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, "ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য এত কিছু করা হচ্ছে ৷ কিন্তু তারপরেও আবর্জনার সমস্যা একই থেকে যাচ্ছে ৷ কনজারভেন্সির ক্ষেত্রে ফিল্ডে নেমে গাইড করতে হবে। রাস্তাঘাট, ড্রেন পরিষ্কার করতে হবে।"
চাষবাসের ক্ষয়ক্ষতি
হাওড়ায় গ্রামীণ এলাকায় চাষবাসের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পুজোর মুখে বন্যার জলে চাষের জমি শেষ হয়ে গিয়েছিল। জলে ডুবে আছে ধান গাছ। সবজির জমিতেও জল থৈ থৈ করছে। আর কদিন পরেই ধান কাটার সময়। তার আগে মাথায় হাত কৃষকদের।
এবার শীতকালীন সবজি চাষেও কাঁটা। বাগনান, দেউলটি এলাকায় একচেটিয়া ফুলের চাষ হয়। তাও শেষ বলে জানাচ্ছেন ফুলচাষিরা। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর পর এবার কালীপুজোতেও ফুলের আকাল দেখা দেবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই দুর্যোগে ফুল, শীতকালীন সবজি চাষ কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল ৷ বৃষ্টিতে যেভাবে মাটি ভিজে আছে, তাতে আলু বসানোই সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা। ক্ষতির মুখে পান বরজের চাষিরাও। দানার সেভাবে দাপট রাজ্যে না পড়লেও গতকাল থেকে একটানা বৃষ্টিতে জল জমার কারণে ক্ষতির মুখে চাষিরা।