কলকাতা, 28 জুলাই: আলুর দাম আগুন ৷ দাম না-কমালে গ্রেফতার করা হবে ৷ শনিবারের এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বাজারের ছবিটা বদল হল না রবিবারও ৷ মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো নবান্নের তৈরি টাস্ক ফোর্সের কর্তারা গতকাল অভিযান চালান কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ৷ টাস্ক ফোর্স বলছে এই অভিযান চলবে ৷ আগামী সপ্তাহে আলুর দাম 30 টাকার নীচে নামানোই লক্ষ্য তাঁদের। কিন্তু এতকিছুর মাঝে ইটিভি ভারত গ্রাউন্ড জিরো থেকে তুলে ধরল বর্তমান পরিস্থিতি ৷
বাগমারি, মানিকতলা বাজারে অভিযান চালিয়ে গতকাল অসাধু খুচরো ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার হুমকি দেন টাস্ক ফোর্স কর্তা রবীন্দ্রনাথ কোলে। তাঁকে দেখা যায়, বেশকিছু ব্যবসায়ীকে সঠিক ভাবে ব্যবসা করার জন্য সতর্ক করতে। পাশাপশি কেন অতিরিক্ত লাভ নিচ্ছেন সেই প্রশ্ন তুলে লাভের পরিমাণ কমিয়ে বিক্রি করতে বললেন। না-হলে এবার গ্রেফতার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিলেন।
- শনিবারের পর রবিবারও একই পরিস্থিতি বাজারে। হুঁশিয়ারিরও পর কেন দাম কমছে না?
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য "আমাদের আলুর বস্তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সেখান থেকে পচা, কাটা আলু বাদ যায় ৷ বস্তা আনার খরচ আছে ৷ তা আমাদের ক্ষতি। টাস্ক ফোর্সের চাপে 32 টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু লাভ না-করে ব্যবসা চালানো যায় না। ফলে এমন চললে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। টাস্ক ফোর্স অভিযান চালালেও আজ কলকাতার খুচরো বাজারে সার্বিক ভাবে আলুর দাম যথেচ্ছ বেশি ৷
খুচরো বিক্রেতাদের কথায়, "ব্যবসায়ীদের কথামতো দাম কমিয়ে, আলু বিক্রি করলে দু'দিন পর দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যবসা তো লাভের জন্য করা ৷"
ক্রেতাদের কথায়, "বেশ কিছুদিন আগেও 20-22 টাকার আলু কিনে খেয়েছিলাম ৷ এখন সেই আলু 35 টাকায় কিনতে হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। দামটা কমুক ওনাদের খরচা আছে অথবা লাভ করতে হবে সবটাই ঠিক। তবে দামটা 22 থেকে 25 টাকার ঘরে থাকলে তাও কোনওমতে চালানো যায় ৷ কারণ আলু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সবজি ৷ সবেতেই প্রয়োজন হয়।"
জ্যোতি-চন্দ্রমুখী আলুর দাম
- জ্যোতি আলু কোনও বাজারে 30-32 টাকা কেজি, কোনও বাজারে 32-35 টাকা ৷ সুপার সিক্স আলুর একটি ধরন যা অনেকে জ্যোতি আলু বলে চালিয়ে দিচ্ছে ৷ এর দাম কেজিতে আরও 1 থেকে 2 টাকা কম।
- চন্দ্রমুখী আলু বাজারে 40-48 টাকা কেজি। আবার হেমাঙ্গিনী আলু চন্দ্রমুখী বলে চালাচ্ছেন কেউ কেউ ৷ সেটাও চন্দ্রমুখীর তুলনায় কেজিতে 2-3 টাকা কেনা দামে কম ৷ চন্দ্রমুখী বলে সেই দামে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
সবজির দাম আকাশছোঁয়ার পর- মরশুমি সবজি চলতি মাসের শুরুতে ছুঁয়েছিল 100 টাকা কেজির ঘর। যা ছিল আমজনতার হাতের নাগালের বাইরে। পরিস্থিতি বুঝে তড়িঘড়ি নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন থেকেই 10 দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সবজির দাম কমাতে। এরপর পুলিশ, পুরসভা, টাস্ক ফোর্স শহরজুড়ে বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে লাগাতার অভিযান চলায়। ভালো করে বোঝান ও সতর্ক করেন। ফলস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রীর নির্ধারিত সময় মধ্যেই দাম কমে সবজির। আমজনতা খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্দেশ- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া 10 দিনের সময়সীমা কেটেছে বেশ কয়েকদিন হল ৷ কিন্তু সবজির দাম কমতে আচমকাই আলুর দাম বিদ্যুৎ গতিতে বেড়ে চলেছে । 22-26 টাকা কেজি জ্যোতি আলুর দাম বাড়তে বাড়তে পৌঁছে যায় 35-40 টাকা কেজিতে। ফের বাজারগুলোয় টাস্ক ফোর্স অভিযান শুরু করে।
আলুর দাম বাড়ছে যেভাবে- সূত্র বলছে, আলু মাঠেই বিক্রি হয়েছে 15 থেকে 16 টাকা কেজি হিসেবে ৷ কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে কমপক্ষে 6 টাকা খরচ হয়। তার উপরে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিবহণ রয়েছে ৷ দাম দাঁড়াচ্ছে 26 টাকা। শহরের বড় আলু ব্যবসায়ীরা 1 টাকা লাভ রাখছেন কেজিতে (27)। তাঁদের হাত থেকে হোলসেলারদের কাছ আসতে আরও 1 টাকা লাভ রেখে 28 টাকা দাঁড়াচ্ছে ৷ খুচরো বিক্রেতারা আরও 2-3 টাকা লাভ রেখে কেজি প্রতি 30-31 টাকায় বিক্রি করতে পারেন ৷