দত্তপুকুর 31 অক্টোবর: দত্তপুকুরে রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হল আরও দুই শ্রমিকের । বুধবার গভীর রাতে চিকিৎসারত অবস্থায় জয়দেব কর্মকার নামে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বারাসত মেডিক্যালে। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে আরও এক শ্রমিক শের আলির ৷ এমনটাই খবর হাসপাতাল সূত্রে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই দুই শ্রমিকের শরীরের প্রায় আশি শতাংশই পুড়ে ঝলসে গিয়েছিল । গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদেরকে ভর্তি করা হয়েছিল বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছিল। এর আগে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল বিশ্বনাথ বোস নামে এক শ্রমিকের । এবার মারা গেলেন জখম জয়দেব কর্মকার আর শের আলি নামের দুই শ্রমিক । ফলে,অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন।
ওই রাসায়নিক কারখানার মালিকের জামাই কুলদীপ সিং-ও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তিনিও ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বারাসত মেডিক্যালে। পরে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই আপাতত যমেমানুষে লড়াই চালাচ্ছেন কুলদীপ।
এদিকে, রাসায়নিক কারখানায় আগুনের ভয়াবহতা দেখে আঁতকে উঠেছেন এলাকার লোকজনও। দীপাবলির উৎসব হওয়ায় কারখানার অনেক শ্রমিকই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তা না হলে প্রাণহানীর আশঙ্কা হতে পারত তাঁদেরও।
সূত্রের খবর, বছর দু'য়েক আগেও দত্তপুকুরের এই রাসায়নিক তেল পরিশোধনের কারখানায় ছোটখাটো আগুন লেগেছিল। সেই সময় কারখানা কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষার দিকে জোর দিতে বলেছিলেন বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তারপরও সুরক্ষা ব্যবস্থায় সে ভাবে জোর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, আগুন লাগার দু'বছরের মাথায় ফের ওই রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
যদিও,ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল বিভাগ দাবি করেছিলেন,ওই কারখানায় অগ্নিনির্বাপক সুরক্ষা থাকলেও তা যথাযথ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।এক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি থাকলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ ও দমকল বিভাগ, উভয়ই।
প্রসঙ্গত, দত্তপুকুরের কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের চন্ডীগড়ি গ্রামে রাসায়নিক তেল পরিশোধনের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে বুধবার দুপুরে। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিশ্বনাথ বোস নামে এক শ্রমিকের। আগুনে ঝলসে গুরুতর জখম হন আরও তিন শ্রমিক। মৃত এবং জখমরা প্রত্যেকেই কারখানার ভিতরে কাজ করছিলেন।
সেই সময় আচমকাই তেলের পাইপলাইন লিক করে আগুন লেগে যায় কারখানার ভিতরে। কারখানায় প্রচুর দাহ্য তরল এবং রাসায়নিক তেল মজুত থাকায় নিমেষে আগুনে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আকাশ!যার জেরে আগুন নেভাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে। শেষমেশ পাঁচটি ইঞ্জিন ও বিশেষ ফোমের সহায়তায় প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার যুদ্ধকালীন প্রচেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনতে সমর্থ হন দমকল বিভাগ।