কলকাতা, 22 অগস্ট: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখলেন তিন সিপিএম নেতা। কার্যত সকলেই তাঁর সাদামাটা জীবন দর্শন ও পার্টির প্রতি আনুগত্যের বিষয়গুলি উল্লেখ করেন। 'কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ'- বুদ্ধবাবুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লড়াই আন্দোলনের শপথও নিলেন।
এদিন বিমান বসু বলেন, "আজকাল পরিষদীয় কাজে যাঁরা থাকেন তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন বা যে ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন তা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সময়েও ছিল। কিন্তু কোনওদিন তাঁর কোনও অশালীন আচার আচরণ ছিল না।" একই সঙ্গে বিমান বসু আরও বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন কোনও পার্টির সভা-সমিতিতে যেতেন বক্তৃতা দিয়ে সংগঠনের কাজ শেষ করতেন না। বক্তৃতা শেষে সাধারণ মানুষ স্থানীয় নেতৃত্বের কথা অভিযোগ শুনতেন। কিন্তু এখন অনেক নেতাই সকলে বক্তৃতা দিয়ে চলে আসেন। তাঁরা এটাকেই সংগঠনের শেষ কাজ বলে মনে করেন।"
স্মৃতি রোমন্থন করে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "আমি পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক থাকাকালীন বুদ্ধ অসুস্থ ছিলেন ৷ সে সময়ে তাঁর অনেক কথাই মনে পড়ে। অসুস্থ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি বাড়ি ফেরার জন্য তৎপর হয়ে পড়েন। তাঁকে কেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন। চিকিৎসকরা তাঁকে ছাড়তে নারাজ। বুদ্ধদেব চিকিৎসকদের বলেন, মাই লাইফ ইস মাই লাইফ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে চিকিৎসকরা আমাকে ফোন করেন। আমি, সেলিম, বিমানদা তখন হাসপাতালে ছুটে যাই। বলতে বাধ্য হই ইওর লাইফ ইজ নট ইওরস। আপনার জীবন শুধু আপনারই নয় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ যারা আপনাকে ভরসা করে তাদেরও।"
মহম্মদ সেলিম বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে কালি ছেটানোর চেষ্টা হয়েছে। যৌবনকে শেষ করতে চাওয়া হয়েছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্নকে বাঁচতে লালন পালন করতে হবে। নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে তখন তাঁকে আরও বেশি মনে পড়বে। বুদ্ধদা এগ্রেসেভলি সেকুলার। কোনও হিপোক্রেসি ছিল না। চোয়ালটাকে শক্ত করতে হবে। মুষ্ঠিবদ্ধ হাতকে আরও উঁচুতে তুলতে হবে। একা লড়া যায় না। অনেককে একসঙ্গে নিয়ে লড়তে হয়। তিনি সবাইকে নিয়ে লড়াই করতে চেয়েছিলেন। বেকারত্বের জ্বালা বুজতে পেরে ছিলেন। কারণ তাঁর উঠে আসা যুব আন্দোলন থেকে।
দুর্ভাগ্য যখন শায়িত আছে তখনও কেউ কেউ লেফট হ্যান্ড এর মতো সমালোচনা করেছিলেন।"
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ সভায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু কর্মী-সমর্থক এসেছিলেন। বুদ্ধজায়া মীরা ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির একাধিক নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চের সামনে থেকে সব শুনলেও দেখলেও একটিবারের জন্য মঞ্চে ওঠেননি মীরা ভট্টাচার্য। যদিও সেলিম বারে বারে তাঁকে মঞ্চে ওঠার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লেখা এবং তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে লেখা একাধিক বই কয়েক হাজার বিক্রি হয়েছে।