ETV Bharat / state

দক্ষ আধিকারিকদের গোয়েন্দা বিভাগে ফেরাচ্ছেন নগরপাল মনোজ ভার্মা - POLICE COMMISSIONER MANOJ VERMA

দীর্ঘদিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের সরিয়ে দিতেই এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেড়েছে অপরাধের প্রবণতা । তাই ওই সমস্ত আধিকারিকদের এবার থানায় ফেরানো হচ্ছে ৷

CP Manoj Verma
নগরপাল মনোজ ভার্মা (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 23, 2024, 5:30 PM IST

কলকাতা, 23 নভেম্বর: দীর্ঘদিন ধরে কাজ জানা আধিকারিকদের লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে ফেরাচ্ছেন নগরপাল মনোজ ভার্মা ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকের পরই নড়েচড়ে বসেছে সিআইডি । কলকাতা পুলিশের উঁচু থেকে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে হয়েছে রদবদল ।

বিগত কয়েক বছর আগে থেকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ওসি, এই সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের আচমকাই বিভিন্ন থানায় বদলি করে দেওয়া হয়েছিল । একটি পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে বিভিন্ন থানায় ট্রান্সফার করে দেওয়ার পর তুলনামূলকভাবে শহরে অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে । গোয়েন্দা বিভাগে আধিকারিকদের ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে । ফলে অপরাধ চিহ্নিত করার কাজ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে ।

তাই এবার দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে আসা ওই সকল পুলিশ আধিকারিকদের থানা থেকে বদলি করে ফের আগের জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ অর্থাৎ পুনরায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে ফিরছেন তাঁরা । পাশাপাশি এতদিন ধরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মরত ওই সকল পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন ঘটনা প্রবণ থানার অফিসার ইনচার্জ পদে বসানো হচ্ছে ।

এই আধিকারিকদের মধ্যেই রয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞ সম্পন্ন অফিসার ইনচার্জ সৌম্য ঠাকুর ৷ এতদিন অন্য জায়গায় ওসির দায়িত্বে ছিলেন তিনি । এখন তাঁকে বদলি করে মুচিপাড়া থানার দায়িত্ব দেওয়া হল । পাশাপাশি এতদিন দক্ষিণ কলকাতার ময়দান থানার অতিরিক্ত ওসির পদে ছিলেন দীপঙ্কর বিশ্বাস । এবার তাঁকে বদলি করা হয়েছে লেদার কমপ্লেক্স থানায় । দীপঙ্কর বিশ্বাসের জায়গায় ময়দান থানার অতিরিক্ত ওসি হলেন ইন্সপেক্টর শেখ সাবিরউদ্দিন । তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর ছিলেন ।

এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘মূলত ক্রাইম ডিটেকশন কমছে এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । ফলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিকদের পুনরায় সেই বিভাগে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে । তার মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে । বিভিন্ন ঘটনা প্রবণ এলাকার থানায় ভালো কাজ জানা অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ।’’

সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের একাধিক গাফিলতি তুলে ধরে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে বলেন, ‘‘কোনও পুলিশ আধিকারিক বা পুলিশ কর্মী যদি দুর্নীতিপরায়ণ হয়, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা করা হবে । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সিআইডিকে তিনি আরও ভালোভাবে সাজাবেন । সিআইডিতে কাজ জানা লোককে বসানো হবে । এর জন্য রাজীব কুমারকে তিনি নির্দেশ দেন, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে ।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর তড়িঘড়ি প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেটের কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার । সঙ্গে ছিলেন এসটিএফের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং সিআইডির গোয়েন্দারাও । তারপরেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সিআইডি তরফ থেকে গোপন তল্লাশি অভিযান এবং বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয় । বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি ।

এর আগে দেখা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকা অতিরিক্ত নগরপাল মুরলীধর শর্মাকে তড়িঘড়ি লালবাজার থেকে সরিয়ে তাঁকে পুলিশ ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয় । আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, যেহেতু আরজি কর কাণ্ডের পর অনেকটা ব্যাকফুটে আসতে হয় কলকাতা পুলিশকে, তার ফলেই মুরলীধর শর্মাকে তড়িঘড়ি কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে ।

এবার কলকাতা পুলিশের নতুন গোয়েন্দা প্রধান হবেন আইপিএস প্রণব কুমার । যদিও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান রয়েছেন আইপিএস রূপেশ কুমার । সম্প্রতি কসবার রাজডাঙায় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের উপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় বিহার গ্যাংয়ের যোগ পাওয়া যায় । কলকাতা পুরনিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর তাঁর বাড়ির সামনে বসেছিলেন, সেই সময় স্কুটি চড়ে দুই দুষ্কৃতী আসে । তাদের মধ্যে এক আততায়ী স্কুটি থেকে নেমে বন্দুক তাক করে সুশান্তর দিকে । কোনোক্রমে বন্দুকটি লক হয়ে যাওয়াতে এই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ ।

এই ঘটনার পর থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে পুলিশের ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে । কীভাবে রাতের শহরে একজন জনপ্রতিনিধির উপর এরকম হামলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে গেল এবং পুলিশ কিছুই জানতেই পারল না, সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷ তারপরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায়, পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ।

কলকাতা, 23 নভেম্বর: দীর্ঘদিন ধরে কাজ জানা আধিকারিকদের লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে ফেরাচ্ছেন নগরপাল মনোজ ভার্মা ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকের পরই নড়েচড়ে বসেছে সিআইডি । কলকাতা পুলিশের উঁচু থেকে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে হয়েছে রদবদল ।

বিগত কয়েক বছর আগে থেকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ওসি, এই সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের আচমকাই বিভিন্ন থানায় বদলি করে দেওয়া হয়েছিল । একটি পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে বিভিন্ন থানায় ট্রান্সফার করে দেওয়ার পর তুলনামূলকভাবে শহরে অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে । গোয়েন্দা বিভাগে আধিকারিকদের ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে । ফলে অপরাধ চিহ্নিত করার কাজ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে ।

তাই এবার দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে আসা ওই সকল পুলিশ আধিকারিকদের থানা থেকে বদলি করে ফের আগের জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ অর্থাৎ পুনরায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে ফিরছেন তাঁরা । পাশাপাশি এতদিন ধরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মরত ওই সকল পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন ঘটনা প্রবণ থানার অফিসার ইনচার্জ পদে বসানো হচ্ছে ।

এই আধিকারিকদের মধ্যেই রয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞ সম্পন্ন অফিসার ইনচার্জ সৌম্য ঠাকুর ৷ এতদিন অন্য জায়গায় ওসির দায়িত্বে ছিলেন তিনি । এখন তাঁকে বদলি করে মুচিপাড়া থানার দায়িত্ব দেওয়া হল । পাশাপাশি এতদিন দক্ষিণ কলকাতার ময়দান থানার অতিরিক্ত ওসির পদে ছিলেন দীপঙ্কর বিশ্বাস । এবার তাঁকে বদলি করা হয়েছে লেদার কমপ্লেক্স থানায় । দীপঙ্কর বিশ্বাসের জায়গায় ময়দান থানার অতিরিক্ত ওসি হলেন ইন্সপেক্টর শেখ সাবিরউদ্দিন । তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর ছিলেন ।

এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘মূলত ক্রাইম ডিটেকশন কমছে এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । ফলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিকদের পুনরায় সেই বিভাগে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে । তার মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে । বিভিন্ন ঘটনা প্রবণ এলাকার থানায় ভালো কাজ জানা অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ।’’

সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের একাধিক গাফিলতি তুলে ধরে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে বলেন, ‘‘কোনও পুলিশ আধিকারিক বা পুলিশ কর্মী যদি দুর্নীতিপরায়ণ হয়, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা করা হবে । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সিআইডিকে তিনি আরও ভালোভাবে সাজাবেন । সিআইডিতে কাজ জানা লোককে বসানো হবে । এর জন্য রাজীব কুমারকে তিনি নির্দেশ দেন, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে ।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর তড়িঘড়ি প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেটের কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার । সঙ্গে ছিলেন এসটিএফের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং সিআইডির গোয়েন্দারাও । তারপরেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সিআইডি তরফ থেকে গোপন তল্লাশি অভিযান এবং বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয় । বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি ।

এর আগে দেখা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকা অতিরিক্ত নগরপাল মুরলীধর শর্মাকে তড়িঘড়ি লালবাজার থেকে সরিয়ে তাঁকে পুলিশ ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয় । আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, যেহেতু আরজি কর কাণ্ডের পর অনেকটা ব্যাকফুটে আসতে হয় কলকাতা পুলিশকে, তার ফলেই মুরলীধর শর্মাকে তড়িঘড়ি কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে ।

এবার কলকাতা পুলিশের নতুন গোয়েন্দা প্রধান হবেন আইপিএস প্রণব কুমার । যদিও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান রয়েছেন আইপিএস রূপেশ কুমার । সম্প্রতি কসবার রাজডাঙায় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের উপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় বিহার গ্যাংয়ের যোগ পাওয়া যায় । কলকাতা পুরনিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর তাঁর বাড়ির সামনে বসেছিলেন, সেই সময় স্কুটি চড়ে দুই দুষ্কৃতী আসে । তাদের মধ্যে এক আততায়ী স্কুটি থেকে নেমে বন্দুক তাক করে সুশান্তর দিকে । কোনোক্রমে বন্দুকটি লক হয়ে যাওয়াতে এই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ ।

এই ঘটনার পর থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে পুলিশের ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে । কীভাবে রাতের শহরে একজন জনপ্রতিনিধির উপর এরকম হামলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে গেল এবং পুলিশ কিছুই জানতেই পারল না, সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷ তারপরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায়, পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.