কলকাতা, 12 ডিসেম্বর: যুগ যত এগিয়েছে, দেশে ততই বেড়েছে বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদের ঘটনা । সম্পর্কের এই ভাঙনের সবথেকে খারাপ প্রভাব পড়ে শিশুদের উপর । তাই এই সব ক্ষেত্রে সন্তানের বিষয়ে বিশেষ গাইডলাইন তৈরির জন্য জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সেই কমিটি আজ আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছে ৷ আশি পাতার রিপোর্টে শিশু সন্তানের স্বার্থে একাধিক পরামর্শ দিয়েছে কমিটি ৷ বিবাহবিচ্ছেদের পরও বাচ্চাকে কীভাবে যৌথ দায়িত্বে রাখা যায়, কীভাবে তার সামাজিক সমস্ত চাহিদা পূরণ করা যায়, তার সুপারিশ রিপোর্টে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷
বৈবাহিক বিচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হলে সন্তান কার হেফাজতে থাকবে ? ছোটরা ভালোবাসা, যত্ন চায় বাবা-মা দু'জনের থেকেই । বাবা-মা দূরে চলে গেলে সন্তানের স্কুলের বিষয় থেকে শুরু করে তার জন্মদিন বা অন্য কারণে তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার বিষয়ে গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা ।
2022 সালে দায়ের হওয়া সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের রুল কমিটিকে । বৃহস্পতিবার সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ল হাইকোর্টে । তবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নিয়মিত বেঞ্চ এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি হরীশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ।
উল্লেখ্য, বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানদের হেফাজত নিয়ে চাইল্ড রাইটস ফাউন্ডেশন একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করেছিল সাতটি চ্যাপ্টারে । কীভাবে সন্তানের দেখভাল হবে, সেই সংক্রান্ত একাধিক পরামর্শ রয়েছে সেখানে ৷ সেখানে যে বিষয়গুলির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল,
1) মামলা চলাকালীন সন্তানের দেখভাল
2) বিচ্ছেদের মামলার নিষ্পত্তির পর সন্তানের দেখভাল
3) বাবা ও মায়ের 200 কিলোমিটারের মধ্যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ
4) 200 কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে বাবা ও মায়ের অবস্থান হলে তার দেখভাল কীভাবে হবে তার পর্যবেক্ষণ
5) সন্তানের বাবা ও মায়ের যৌথ হেফাজতে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণ
6) মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসকের দ্বারা বাবা, মা ও সন্তানের মানসিক দিকটি পর্যবেক্ষণ ।
7) আদালত নিযুক্ত পর্যবেক্ষকের ভূমিকা
সেই গাইডলাইনকে মান্যতা দেওয়া নিয়ে প্রথম মামলা হয় মুম্বই হাইকোর্টে । ওই গাইডলাইনকে প্রথম মান্যতাও দেয় মুম্বই হাইকোর্ট । এরপর মহারাষ্ট্রের নিম্ন আদালতগুলি ওই গাইডলাইন মেনে বিচার প্রক্রিয়া চালায় । পরবর্তীকালে হিমাচল, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও হরিয়ানা এবং কর্ণাটক হাইকোর্টেও চাইল্ড রাইটস ফাউন্ডেশনের গাইডলাইন মান্যতা পায় । সেই অনুযায়ী ওই রাজ্যগুলির নিম্ন আদালত সন্তানদের হেফাজত মামলার বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ওই গাইডলাইনকে মেনে চলে ।
একই দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ডক্টর রাতুল রায় । শুনানির প্রথমেই আদালত বিষয়টি পাঠায় কলকাতা হাইকোর্ট রুল কমিটির কাছে । বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রুল কমিটি একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে । রিপোর্ট দেখে বিচারপতি হরীশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ । দীর্ঘ রিপোর্টে একাধিক বিষয়ের সুপারিশ করা হয়েছে ৷