কলকাতা, 30 জানুয়ারি: চলতি বছরে 150 বছরে পা দেবে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নিউ মার্কেট ৷ এই মার্কেট চত্বরে লন্ডনের বিগ বেনের আদলে একটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে ৷ যার বয়স প্রায় 100 ৷ এই ক্লক টাওয়ার এবং তার সঙ্গে পরিকাঠামোটি আনা হয়েছিল ইংল্যান্ডে হার্ডসফিল্ড থেকে ৷ এক সময় ব্যস্ত ধর্মতলা এই ঘড়ি দেখে ও ঘণ্টা শুনে সময় দেখত ৷ বছর 10 আগে থমকে যায় এই ক্লক টাওয়ারের কাঁটা ৷ এবার সেই ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটা ফের ঘুরতে চলেছে ৷ শুধু তাই নয়, নিউমার্কেট থেকে ধর্মতলা চত্বর শুনবে লন্ডনের বিগ বেনের মতো সেই পুরনো ঘণ্টার শব্দ ৷
1874 সালে 1 জানুয়ারি এই নিউ মার্কেট তৈরি হয় ৷ তৎকালীন কলকাতা পৌরনিগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংরেজদের জন্য একটি বাজার করবে ৷ সেই অনুসারে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির আর্কিটেক্ট এই বাজারের নকশা তৈরি করেন ৷ ম্যাকিনটোস বার্ন এই বাজার তৈরি করে ৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বাজারের দক্ষিণে এই ক্লক টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয় ৷ এই ঘড়ি ঘণ্টা-সহ গোটা পরিকাঠাম ইংল্যান্ডের হার্ডসফিল্ড থেকে আনা হয় ৷ পরে স্যর স্টুয়ার্ড হগের নাম অনুসারে এর নাম হয় এসএস হগ মার্কেট হয় ৷ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঘড়িটি চলতে থাকলেও বয়সের ভারে ধীরে ধীরে সমস্যা দেখা দেয় ৷ অতীতে সামান্য সংস্কার করা হয় ৷ তবে ভারতে ওই ঘড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না ৷ তাই বছর দশেক আগে থেমে যায় ঘড়ির কাঁটা ৷
কলকাতা পৌরনিগমের তরফে এই ঘড়ি সংস্কারের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয় ৷ তবে তার জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানা যায় ৷ আর্থিক অনটনের জেরে তাই আর কোনও পদক্ষেপ করে উঠতে পারেনি কলকাতা পৌরনিগম ৷ তবে এই ঐতিহ্যরক্ষায় এগিয়ে আসেন কলকাতার বেশ কিছু ঐতিহ্যপ্রেমী নাগরিক ৷ তাঁরাই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে এই ঘড়ি সারানোর আবেদন ৷ আর্থিক খরচ তাঁরাই বহন করবেন ৷ কলকাতা পৌরনিগম কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৷
এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের বাজার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য আমিরুদ্দিন ববি বলেন, "কলকাতা পৌরনিগম বহুবার ঘড়ি সরানোর চেষ্টা করেছে ৷ তবে অনেক যন্ত্রাংশই পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ আমরা টেন্ডার দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু বিপুল খরচের কারণে কোভিডের আগে তা বাতিল করতে হয় ৷ কোটি টাকার বেশি খরচ ছিল ৷ এবছর নিউ মার্কেটের 150 বছর হতে চলেছে ৷ একটি সংগঠন ওই ঘড়িটি সংস্কারের অনুরোধ করে ৷ আমরা তা মঞ্জুর করেছি ৷ এবার কাজ শুরু হবে ৷"
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মহম্মদ রেজ্জাক বলেন, "দুই প্রজন্মের দোকান ৷ ছোটবেলায় আমরা, পথচলতি সকলেই এই ঘড়ি দেখতাম ৷ প্রতি ঘণ্টায় বেজে উঠত ৷ এবার যদি সেই মুহূর্ত ফিরে আসে, তাহলে খুব ভালো হবে ৷" ঘড়ি সরানোর জন্য উদ্যোগী ঐতিহ্য প্রেমী নাগরিকদের তরফে মোদার পাথারিয়া বলেন, "কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমরা কয়েকজন বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করি ৷ এরকম 20 জন আছেন ৷ এই নিউমার্কেট ঐতিহ্যবাহী ৷ সেখানে এই ক্লক টাওয়ার দীর্ঘ দিন বন্ধ দেখে আমরা পৌরনিগমের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ দেশীয় একটি কোম্পানিকে দিয়ে আমরাই নিজের টাকা খরচে এই ঘড়ি সংস্কার করব ৷ ফের কাঁটা ঘুরবে, বাজবে ঘণ্টা ৷ কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতা পৌরনিগমের টাওয়ার সংস্কার করলেই আমরা কাজ শুরু করব ৷"
আরও পড়ুন: