সন্দেশখালি, 7 মার্চ: শেখ শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে পেয়ে তদন্তে গতি আনতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আকুঞ্জিপাড়ায় একেবারে সন্দেশখালির 'সন্ত্রাস'-এর ডেরাতে পৌঁছে যান সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' ধৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহানের যে বাড়িটি এর আগে ইডি আধিকারিকরা সিল করে দিয়ে এসেছিলেন তার চারপাশ এদিন ঘুরে দেখেন সিবিআইয়ের দুই আধিকারিক। একইভাবে শংকর আঢ্যের বনগাঁর শিমুলতলার বাড়িতেও যায় সিবিআই।
সূত্রের খবর, সিল করা বাড়িতে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক রয়েছে নাকি সন্দেহজনক কোনও কিছু মিলতে পারে সেখান থেকে? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে এদিন সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। বাড়ির পাশাপাশি এদিন শেখ শাহজাহান মার্কেটেও আসেন সিবিআই আধিকারিকরা। গত 5 জানুয়ারি, এখানেই আসার চেষ্টা করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু সেই সময় সেখানকার অফিসঘরটি বন্ধ ছিল বলে খবর। এদিন সেই অফিসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে আসেন সিবিআই আধিকারিকরা। ছবিও তোলেন তাঁরা।
এদিকে এদিন নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান ইডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর গৌরব ভারিল। ইডি-র উপর হামলাকাণ্ডে অভিযোগকারী ছিলেন এই ডেপুটি ডিরেক্টর। আসেন জখম ইডি আধিকারিকও। তদন্তে উঠে আসা তথ্য সিবিআই এবং ইডি'র আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে আদানপ্রদান করেছেন বলে সূত্রের খবর। শাহজাহানের ফোনের কল ডিটেলসের রেকর্ডও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এখন প্রশ্ন, হামলার পর কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শেখ শাহজাহান? সেই বিষয়ে বহু গুরুত্বপর্ণ তথ্য সিডিআরে মিলতে পারে বলে মত তদন্তকারীদের।
দিন দুয়েক আগে, অর্থাৎ 5 মার্চ ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় রাজ্য পুলিশের সিট খারিজ করে ন্যাজাট এবং বনগাঁ থানায় দায়ের করা তিনটি এফআইআরের তদন্তভার সিবিআইকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই নির্দেশে জানানো হয়, শেখ শাহজাহানকেও সিবিআইকে হস্তান্তর করতে হবে।
ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে সেদিনই বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শেখ শাহজাহান ও সেই সংক্রান্ত মামলার যাবতীয় নথি সিবিআইকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া ডেডলাইনের 26 ঘণ্টা পর সিআইডির থেকে নিজেদের হেফাজতে পায় সিবিআই। তাঁকে হেফাজতে পাওয়া মাত্রই সময় নষ্ট না করে সন্দেশখালিতে পৌঁছে যান সিবিআই আধিকারিকরা। পাশাপাশি, বসিরহাট থানায় গিয়ে পুলিশের দায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার নথিও সংগ্রহ করেছে সিবিআই।
প্রসঙ্গত, গত 5 জানুয়ারি তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে শাহজাহান বাহিনীর হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। সেই বেপরোয়া হামলায় রক্তাক্তও হতে হয় ইডির কয়েকজন আধিকারিককে। আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে আসা সিআরপিএফ জওয়ান থেকে শুরু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিও। সেই ঘটনার পর থেকে সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে মোড় নেয়। লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভের জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি। সেই আবহে সন্দেশখালির কাণ্ডের 56 দিনের মাথায় 'মাস্টারমাইন্ড' শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে, ইডির উপর হামলার ঘটনায় বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পরবর্তী কালে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ তদন্তে নামে সিবিআই। ইডি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপর হামলার ঘটনায় এদিন সন্ধ্যায় দুটি গাড়িতে শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে আসে সিবিআই। সিবিআইয়ের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও রাজ্যে পুলিশের আধিকারিকরা। তাঁরা শঙ্করের বাড়িতে না ঢুকলেও প্রায় 20 থেকে 25 মিনিট ধরে চারপাশ ঘুরে দেখেন। সিবিআই আধিকারিকরা শঙ্কর আঢ্যের বাড়ির ছবি তোলার পাশাপাশি তার বাড়ির সামনে রাস্তায় বিদ্যুতের পোলে লাগানো সিসিটিভির ছবিও তোলেন। কথা বলেন রাজ্য পুলিশের আধিকারিকের সঙ্গে।
আরও পড়ুন
1. শাহজাহানকে হেফাজতে পেয়েই তদন্তে গতি বাড়াল সিবিআই, নিজাম প্যালেসে ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর
2. সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বাধা ! রাজারহাটে লকেট-অগ্নিমিত্রাদের আটক বিধাননগর পুলিশের
3. গরম ভাতে চাই ঘি, খাবার নিয়ে শাহজাহানের হাজারো বায়নায় অতিষ্ঠ সিবিআই