আসানসোল, 25 জুন: কয়লাপাচার মামলায় ইসিএল কর্তা ও কয়লা কারবারীকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সাক্ষী হিসেবে বয়ান রেকর্ড করেছে সিবিআই ! অন্তত সিবিআই কোর্টের বিচারকের বিরক্তি ও সিবিআই আইনজীবীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার জেরে এমন চিত্র সামনে এসেছে । আগামী 3 জুলাই চার্জগঠন কয়লাপাচার মামলায় ৷ তার আগে বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই ।
কয়লাপাচার মামলায় ইসিএল অধিকারিক নরেশকুমার সাহা ও কয়লা কারবারি অশ্বিনী যাদবকে নতুন করে গ্রেফতার করে সিবিআই । এঁদের নাম চার্জশিটে ছিল না । গত কয়েকবছরে বারবার ডেকে নরেশকুমার সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই । কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছুই সিজ করতে পারেনি তারা । এমনকি চার দিনের হেফাজতে নিয়েও সিবিআই কিছুই তেমন তথ্য আদালতে পারেনি । পরবর্তী শুনানিতে তাই দু’জনের জেল হেফাজত চান সিবিআই আইনজীবী । আর তাতেই বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী । জানতে চান, "ওদের জেলের ভেতর আটকে রাখতে চাইছেন কেন ? জেলে থাকলে কী সুবিধা ? বাইরে থাকলে কী অসুবিধা ? বুঝিয়ে বলুন ।"
সিবিআই আইনজীবী বলেন, "ওরা বাইরে থাকলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে । অন্য অভিযুক্তদের সতর্ক করতে পারেন । সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন ।" বিচারক তখন পালটা প্রশ্ন করেন, "তাহলে বলতে চাইছেন, এতদিন ধরে যাদেরকে আপনারা খুঁজে পাচ্ছেন না, এরা বেরিয়েই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবেন ?" বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘যতদিন না অন্য কেউ গ্রেফতার হচ্ছে, ততদিন ওরা জেলে আটকে থাকবে ?" এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী ।
সিবিআই ধৃতদের চারদিন হেফাজতের পর আদালতে যে তথ্য পেশ করেছে, তা নিয়েও জোর সওয়াল তুলেছেন বিচারক ৷ বিচারক মাথায় হাত দিয়ে বলেন, "মাই গুডনেস, এটা কি করেছেন ? আপনারা দুজনকে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গেলেন আর আর তাদের স্টেটমেন্ট রেকর্ড করলেন 161/3 ধারা উল্লেখ করে । 161 ধারায় সাক্ষীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । এখানে আপনারা তাঁদের গ্রেফতার করে এই ধরনের বয়ান রেকর্ড করলেন কিভাবে ?’’
সিবিআই কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি । সিবিআই আইনজীবী ধৃতদের 14 দিনের জেল হেফাজতের দাবি জানান ৷ অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জামিনের আবেদন করেন । তিনি বলেন, ‘‘আমার মক্কেল তদন্তে সহযোগিতা করেছেন ৷ 2021 সাল থেকে যতবার তাঁকে নোটিশ দিয়ে ডাকা হয়েছে, ততবার তিনি নিজাম প্যালেসে গিয়েছেন । অতীতে ওঁর বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে ৷ কিন্তু কোনও কিছু সিজ হয়নি । এবার গ্রেফতার করা হয়েছে তাতেও কিছু সিজ হয়নি । এদিকে চারদিন হেফাজতে রাখার পরেও তদন্তের বিশেষ কোনও আপডেট দিতে পারেনি সিবিআই । তাই জেলে রাখার কোনও যুক্তি নেই ।’’
যদিও বিচারক ধৃতদের দশ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন । আগামী 3 জুলাই সিবিআই আদালতে তোলা হবে ওই দু’জনকে । ওই একই দিনে চার্জশিটে থাকা 43 জন অভিযুক্ত ওই দিন উপস্থিত থাকবেন সিবিআই আদালতে । কারণ, ওই দিন কয়লাপাচার মামলায় ফাইনাল চার্জ গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে ।