সন্দেশখালি, 2 মে: সন্দেশখালিতে জমি দখলের তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিদিনই নিত্যনতুন তথ্য উঠে আসছে সিবিআইয়ের হাতে । এবার তাঁদের হাতে উঠে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য । সূত্রের খবর, সরকারি জমির পাট্টার চরিত্র বদল করে, তা বেনামে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম মিজানুর রহমান মোল্লা ।
এই নিয়ে প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়েও কোনও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ । এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নালিশ জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে । শেষমেশ, জমি দখলের সুরাহা পেতে সিবিআইয়ের গড়া পোর্টালে অভিযোগ জানান ডুগরিপাড়ার গ্রামবাসীদের একাংশ ।
সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় যায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল । তারা কথা বলে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর পরিবারের সঙ্গে । তা লিপিবদ্ধও করা হয় । প্রাথমিকভাবে এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেই খবর সিবিআই সূত্রে ।
আদিবাসী অধ্যুষিত ডুগরিপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেওয়া হয়েছিল বাম আমলে । পাট্টা পেলেও সেই সময় জমির দাগ নম্বর হয়নি অধিকাংশ উপভোক্তারই । আবার দাগ নম্বর থাকলেও পাট্টা পাননি অনেকে । এমনই অভিযোগ সেখানকার গ্রামবাসীদের । তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে সরকারের দেওয়া জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তাঁরা । কিন্তু, তৃণমূল আমলে সেই সরকারি জমিতেই নজর পড়ে সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য তথা তৃণমূল নেতা মিজানুর রহমান মোল্লার ।
অভিযোগ, সরকারি জমির পাট্টা থেকে আদিবাসীদের উৎখাত করে সেখানে নিজের দখলদারি নেন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ এই শাসক নেতা । একের পর এক খাস জমি দখল করে সেখানে প্লট বানিয়ে তা লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি । তৃণমূল নেতার নামে সেই সমস্ত অভিযোগই জমা পড়েছিল সিবিআইয়ের গড়া পোর্টালে । অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিবিআই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করায় খুশি উপভোক্তাদের একাংশ ।
এই বিষয়ে আনসার মোল্লা নামে এক প্রৌঢ় গ্রামবাসী বলেন, "ফকিরতকিয়া মৌজায় প্রায় 3 একর 9 শতক জমি ছিল আমাদের । এর মধ্যে 66 শতক জমি বাদ দিয়ে বাকিটা পরিবারের । সেই জমিই জলকর করার নামে লিজে নিয়েছিল তৃণমূল নেতা মিজানুর রহমান মোল্লা । কিন্তু, জলকর না করে তিনি সেই জমিতে ছোট ছোট প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দেয় । প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানালেও আজও ফিরে পায়নি সেই জমি । আশা করছি সিবিআই তদন্ত শুরু করায় এবার জমি ফেরত পাব ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে কাবিল মোল্লা নামে আরও এক গ্রামবাসীর গলাতেও । তাঁর কথায়, "বেদখল হয়ে যাওয়া জমিতে একসময় আমার বাবা-দাদুরা চাষবাস করতেন । সেই জমির যাবতীয় রেকর্ড, দলিলপত্র সবকিছুই রয়েছে । তা সত্ত্বেও গায়ের জোরে মানুষের উপর অত্যাচার করে একের পর এক জমি কব্জায় নিয়েছেন মিজানুর রহমান । শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতাবলে । আমরা চাই, এর একটা সুরাহা হোক । জমির প্রকৃত মালিক তাঁর জমি ফেরত পান । সিবিআইয়ের উপর সেই আস্থা, ভরসা রয়েছে আমাদের ।"
যদিও, নিজের বিরুদ্ধে উঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা মিজানুর রহমান মোল্লা । তাঁর দাবি, "এর সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই । যে সময় ওঁরা জমির পাট্টা পেয়েছিলেন, সেটা বাম আমল । তখন আমরা ছিলাম না । কী আছে না আছে, সেটা বিএলআরও অফিসই ভালো বলতে পারবে । কেন আমার নাম আসছে বুঝতে পারছি না ।"
আরও পড়ুন: