কলকাতা, 15 এপ্রিল: প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের 3টি আসনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ্যে এল ৷ অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস লোকসভা ভোটের প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছিল ৷ সেখানেই এই সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে ৷ এই সংস্থাটি প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে দেখেছে ৷ সেখানেই দেখা যাচ্ছে, 3টি আসনে মোট 37 জন প্রার্থীর মধ্যে 16 জন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাশ ৷ 20 জন প্রার্থীর যোগ্যতা স্নাতক থেকে স্নাতকত্তর স্তর পর্যন্ত ৷ আর 1 জন শুধুমাত্র নিজের নাম সই করতে পারেন ৷
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা নিজের দলকে জেতাতে জোর কদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন ৷ তবে উন্নয়নের সঙ্গে তাল মেলাতে এখন নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ৷ দেশ যাঁরা চালানোর দায়িত্ব যাঁদের হাতে, সেই নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হওয়া দরকার, তা আলোচনায় উঠে এসেছে ৷
প্রথম দফার নির্বাচন 19 এপ্রিল ৷ এদিন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে লোকসভা নির্বাচন ৷ ইতিমধ্যেই প্রথম দফার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা ৷ সেই সমস্ত মনোনয়ন পত্র খতিয়ে দেখছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস নামের সংস্থাটি ৷ এই সংস্থার পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে ৷ সেই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, এই তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন 37 জন প্রার্থী ৷ তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? এই সংস্থার বাংলা শাখা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ প্রকাশিত তথ্য অনুয়ায়ী, জানা গিয়েছে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি আসনে একজন এমন প্রার্থী আছেন যিনি শুধুমাত্র নিজের নামটুকু সই করতে পারেন । 16 জন এমন প্রার্থী আছেন যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা 12 ক্লাস পাস আর 20 জন এমন প্রার্থী আছেন যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর । শতাংশের বিচারে দেখলে মাত্রা 43 শতাংশ প্রার্থী 12 ক্লাস উত্তীর্ণ । আর 54 শতাংশ প্রার্থী এমন রয়েছেন যারা যারা স্নাতক থেকে স্নাতকত্তর উত্তীর্ণ হয়েছেন ।
ওই সংস্থার পক্ষ থেকে উজ্জয়িনী হালিম বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই । তাই নিরক্ষর হলেও নির্বাচনে লড়াইয়ে কোনও বাধা নেই । প্রথম দফার 3টি আসনে নির্বাচনে একজন এমন প্রার্থী রয়েছেন যিনি শুধু নিজের নাম সই করতে পারেন । অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পার করেছেন, এমন প্রার্থী রয়েছেন 2 জন। মাধ্যমিক পাস প্রার্থীর সংখ্যা 7 । উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যাও 7 । স্নাতক উত্তীর্ণ প্রার্থী রয়েছেন 5 জন । পেশাদার স্নাতক প্রার্থীর সংখ্যাও সংখ্যাও রয়েছে 5 জন । আর স্নাতকত্তর প্রার্থী রয়েছেন 7 জন। ডক্টরেট প্রার্থী রয়েছেন 3 জন। মোট 37 জন প্রার্থী প্রথম দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ তাদের মধ্যে থেকেই উত্তরবঙ্গের মানুষ তাদের সংসদ হিসাবে 3 জনকে বেছে নেবেন ।
এই প্রসঙ্গেই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "আমি সরাসরি এটা বিশ্বাস করি না, একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা সব সময় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেই ব্যক্তির জনসংযোগ মানুষের জন্য কাজ অনেক বেশি পর্যবেক্ষণের বিষয় । পঞ্চায়েত পৌরসভা বা বিধানসভার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন না হলেও, লোকসভার ক্ষেত্রে তা নির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। "
অন্যদিকে, আর এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতে, যেহেতু ভারতীয় সংবিধানে কোথাও উল্লেখ করা নেই নির্বাচনে লড়াই করতে গেলে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, "যেখানে দেশের বিদেশ নীতি, অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারিত হয়, সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতাও নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। আবার এটাও সত্যি যে, এই গণতন্ত্রে সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্বকে উৎসাহিত করা হয়েছে ।"
অবসরপ্রাপ্ত আর এক সরকারি কর্মী প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "সাংসদরা দেশের আইন প্রনয়ণ করেন। আমাদের দেশের আইন যারা প্রনয়ন করবেন সেক্ষেত্রে সাংসদ যদি নিরক্ষর হয় তাহলে সেটা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর । সাংসদ নিরক্ষর এটা কোনও ভাবেই শিক্ষিত সমাজে মেনে নেওয়া যায় না।"
আরও পড়ুন: