কলকাতা, 15 জুলাই: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দায়ের করা মানহানি মামলায় দীর্ঘ শুনানির পর রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, শীঘ্রই এই মামলায় রায় দেওয়া হবে ।
এদিনের শুনানিতে রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, "রাজ্যের দুই বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে ভোটের পর শাসক দলের দুই প্রার্থী জয়লাভ করেন । পরে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানান, স্পিকারের কাছে গিয়ে শপথ নিতে চান । রাজভবনে যেতে কোথাও তাঁরা ভয় পাচ্ছেন । অন্য কোনও কিছুর উল্লেখ করা হয়নি চিঠিতে । পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লখ করেন, 'শুনছি মেয়েরা রাজভবন যেতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ সেখানে যা হচ্ছে...' যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে । একইসঙ্গে বলা হয়, দুই নির্বাচিত প্রার্থীকে কেন রাজভবনে যেতে হবে ? তিনি তো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব দিতে পারেন, বিধানসভাতেই শপথ গ্রহণ করতে পারেন তাঁরা । তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও একাধিকবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন, যেগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ।"
এসব শুনানি বিচারপতি জানতে চান, "আপনারা চাইছেন কী ? এই জন্যই সংবাদমাধ্যমকে মামলায় যুক্ত করা প্রয়োজন ছিল ।" বিচারপতির এই কথা শুনে ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, "অবিলম্বে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করা বন্ধ করা হোক । আদালত সেই মর্মে নির্দেশ দিক ।"
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন এজি)-এর দাবি, "কোনও মানহানিকর কিছু ঘটেনি । ফলে স্থগিতাদেশের প্রশ্নই ওঠে না । মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেখানে একটা জায়গায় রয়েছে, 'রাজভবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলারা রাজভবন যেতে সুরক্ষিত মনে করছেন না,' এটা মানহানিকর কোথায় ? এই ঘটনা জনসমক্ষে এসেছে তো অনেক আগেই ! মিডিয়াতে যে সমস্ত মন্তব্য করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মানহানির মামলায় সংবাদমাধ্যমকে যুক্ত না করলে সেই মামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ।"
এজি কিশোর দত্ত নবনির্বাচিত বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকারের তরফে বলেন, "আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালের অভিযোগ, মিডিয়ায় আমি নাকি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছি । কিন্তু পাবলিক ফিগারদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কথা বলা ও আলোচনা করা স্বাভাবিক ।" এজি এবিষয়ে একাধিক নির্দেশ উল্লেখ করে এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেন ।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে জয়ন্ত মিত্র (প্রাক্তন এজি) বলেন, "তিনি (সায়ন্তিকা) রাজ্যপালকে যে চিঠি লিখেছেন, তাতে কোথাও অসম্মানজনক একটাও কথা নেই । তিনি রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন, যাতে তাঁকে বিধানসভায় এসে রাজ্যপাল শপথ গ্রহণ করান । কারণ সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মহিলা হিসাবে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন । কিন্তু এখানে যেহেতু সংবাদমাধ্যমকে যুক্ত করা হয়নি, ফলে এই মামলা খারিজ করা উচিত ।"
এরপর রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী পালটা সওয়াল করে বলেন, "রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোথাও কোনও ফৌজদারি মামলা নেই । তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করা হবে কেন ? কোনওরকম প্রমাণ ছাড়াই মেয়েরা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন এই মন্তব্যই অসম্মানজনক ।
'মেয়েরা এসে আমাকে বলছে' - মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যই এক ধরনের শক্রতাকে ঈঙ্গিত করে ।"
দু'পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চ ৷