কলকাতা ১৯ নভেম্বর: বেলডাঙায় অশান্তি ও বোমা বিস্ফোরণ-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিসন বেঞ্চ এই রিপোর্ট তলব করেছে ৷
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী ৷ তিনি এই ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন আদালতের কাছে ৷ সেই মামলাতেই রাজ্যের রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট ৷ আগামিকাল ফের শুনানি ৷
এদিন মামলার শুনানিতে আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি বলেন, ‘‘বেলডাঙার পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক । নানাভাবে ওই এলাকায় ধর্মীয় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে । বিশেষ করে হালদারপাড়া এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি সংকটজনক । একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে ।’’
আদালতে তিনি দাবি করেন, ‘‘পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না । পুলিশ তার ভূমিকায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ । এই অবস্থায় সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন । মানুষের জন্য নিরাপত্তার স্বার্থেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের প্রয়োজন । একই সঙ্গে বেলডাঙা বিস্ফোরণ-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় এজেন্সি বা এনআইএ-কে তদন্তভার দেওয়া উচিত ।’’
আদালতে কৌস্তভ আরও বলেন, ‘‘এলাকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ । পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ভাগরথী এক্সপ্রেস বেলডাঙা স্টেশনের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় । একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি পুরো বেলডাঙা জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, সেই ভিডিয়ো ফুটেজ আছে ।’’
বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন, ‘‘ছবি এবং সরকারি রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে সেখানে যথেষ্ট বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং বেশ কিছু গ্রেফতারি হয়েছে । পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে । সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের প্রয়োজনীয়তা কী ?’’
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান, ব়্যাফ-সহ প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে । কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেনি ।
বিচারপতি বলেন, ‘‘শুধু বন্দোবস্ত থাকলে হবে না । শান্তি রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে । কী পদক্ষেপ করা হয়েছে ?’’ একই সঙ্গে বিচারপতি জানতে চান, ‘‘ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে ?’’
উত্তরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘এখন কোনও অশান্তি নেই । এডিজি দক্ষিণবঙ্গ-এর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী রয়েছে । যথেষ্ট বাহিনী আছে । কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও প্রয়োজন নেই । একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে । চারশোর বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে । পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।’’
কৌস্তভ বাগচি জানান, গয়াচাঁদ রক্ষিত, কৃষ্ণ গরাই-সহ এখনও পর্যন্ত পাঁচজন নিখোঁজ । পুলিশ ব্যর্থ । এরপর যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী না-যায়, তাহলে কোনও প্রাণহানি হলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে দায় নিতে হবে ।
শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র তার দায়িত্ব পালন করতে চায় । এই ধরনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব অবশ্যই রয়েছে । কেন্দ্র তা পালন করতে চায় দায়িত্ব দেওয়া হলে ।’’
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্যের বাহিনীর ম্যানুয়াল আলাদা । একসঙ্গে কাজ করাও অসুবিধা । অগেও এই সমস্যা হয়েছে । এই জটিলতার কোনও প্রয়োজন নেই ।’’
এর পর আদালত রাজ্যকে এই নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলে ৷ আগামিকাল, বুধবার এই রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে রাজ্য সরকার ৷ আগামিকালই এই নিয়ে আবার শুনানি হবে ৷