কলকাতা, 22 এপ্রিল: স্কুল সার্ভিস কমিশনের 2016 পুরো প্যানেল (গ্রুপ-সি, ডি, নবম-দ্বাদশ) বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 281 পাতার রায় দান করল হাইকোর্ট ৷ সেই রায়ে 25,753 জনের নিয়োগ বাতিল করল বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ একইসঙ্গে নয়া টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ৷ ভোট মিটলে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে ৷
এখানেই শেষ নয়, বেআইনিভাবে যারা চাকরি করেছেন তাদের 12% সুদ-সহ বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের হাইকোর্টের নির্দেশ, 6 সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরতের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে ৷ একইসঙ্গে সিবিআই'কে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি সমস্ত ওএমআর শিটের কপি এসএসসি সার্ভারে আপলোড করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ পরবর্তী তদন্ত চলাকালীন নিয়োগ দুর্নীতিতে যদি রাজ্যের আরও কোনও মন্ত্রীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে সিবিআই ৷
এদিকে হাইকোর্টের রায়ে অখুশি স্কুল সার্ভিস কমিশন ৷ এদিন রায়দানের কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ৷ তাঁর অভিযোগ, পাঁচ হাজার অভিযুক্তের জন্য কেন 26 হাজারের নিয়োগ বাতিল হবে? সেইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি ৷
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে 2016 সালে রাজ্যে সরকারি স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই ৷ এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তৎকালীন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ৷ তিনি ছাড়াও জেলবন্দি শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট ব্যক্তি ৷ নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে নিয়োগের পাশাপাশি স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট 2016 (এসএলএসটি)-এর মাধ্যমে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি'র নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় প্রচুর অযোগ্য শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ গত 9 নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাস থেকে । ছয় মাসের মধ্যে মামলার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত । মামলাকারী, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানিয়েছিলেন, রায়দানের পর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকবে ।
এদিন রায় ঘোষণার আগে এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ লেখেন, "শিক্ষক চাকরি মামলায় যেখানে ভুল, অন্যায়, ব্যবস্থা হোক। দোষীরা শাস্তি পাক। কিন্তু, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরিতে যেন বাধা না হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে তাদের চাকরির চেষ্টা করেছে। কিছু অন্যায়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন যোগ্যদের অনিশ্চয়তায় ফেলে না দেওয়া হয়। এদের স্বার্থে যা চেষ্টা দরকার, সরকার করেছে। এদের অবিলম্বে চাকরি দরকার। আশা করি আদালতের রায়ে এই চাকরির জট খুলতে সরকারের চেষ্টা মান্যতা পাবে।"
আরও পড়ুন: