কলকাতা, 25 জুলাই: পড়াশোনা থেকে শুরু করে বৈবাহিক বা পারিবারিক সম্পর্কের চাপে মানসিক সমস্যা বাড়ছে। সময়ে কেরিয়ার গড়তে না-পেরে বা বৈবাহিক সমস্যার ফলে অনেকেই প্রবল মানসিক চাপে ভোগেন । সেই চাপ সহ্য করতে না-পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বহু মানুষ। যাঁদের বয়স 20 থেকে 30 বছরের মধ্যে তাঁদের সমস্যা বেশি । শুধু তাই নয়, এই প্রবণতা সম্প্রতিতে আরও অনেকটাই বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই প্রবণতাকে প্রতিরোধ করতে 2017 সালে মেন্টাল হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট নামে একটা আইন তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই আইন লাগু করার অংশ হিসেবে 2020 সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আত্মহত্যা প্রতিরোধে এই অ্যাক্টকে কার্যকর করার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ তেমন চোখে পড়ছে না বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন সুরেশ কুমার সাহু নামে কলকাতা হাইকোর্টেরই একজন আইনজীবী।
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ গত জুন মাসে একটি নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনামা কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিবকে আগামী 6 সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীর বক্তব্য শুনে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, 2017 সালে মেন্টাল হেলথ কেয়ার অ্যাক্টের 94 ও 115 ধারাকে বিশেষভাবে লাগু করতে হবে । এখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও অমানসিক চাপ কমানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মামলাকারী দাবি, অনেক ছাত্রছাত্রী বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বা অন্যান্য পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত থাকেন। অন্য কোনওভাবে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। তাঁদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করুক আরও বেশি করে। যেখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে। এতে রাজ্যের যুক্তি, তারা ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে। একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে টোল ফ্রি নম্বর । তাছাড়া মেডিক্যাল পড়ুয়াদের গেটকিপার ট্রেনিং দেওয়ার ব্যাবস্থাও করা হয়েছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে।
আত্মহত্যা যাতে কমানো যায় তার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগের উপরও জোর দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম । তাঁর পর্যবেক্ষণ, আত্মহত্যার মতো ঘটনা আটকাতে সংবাদমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদমাধ্যম এই ধরনের খবর পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের ফোন নম্বর উল্লেখ করতে পারে ৷ তার ফলে কারও প্রয়োজন হলে তিনি টোল ফ্রি নম্বরে যোগাযোগ করে উপকৃত হতে পারেন।
উদাহরণ হিসাবে তিনি চেন্নাইয়ের চিকিৎসক লক্ষ্মী বিজয় কুমারের সংস্থা স্নেহা (SNEHA)-র কথা উল্লেখ করেছেন। চেন্নাইয়ে ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষার সমস্ত সংবাদপত্রে এই ধরনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয় তার সঙ্গে সঙ্গে এই সংগঠনের নম্বর প্রকাশ করা হয় সাধারণ জনগণের সুবিধার জন্য। এরাজ্যেও সেইরকম উদ্যোগ করা যেতে পারেও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
বিঃ দ্রঃ- (আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয় ৷ যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল 8টা থেকে রাত 10টার মধ্যে) ।