কলকাতা, 23 এপ্রিল: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে 2016 সালের সম্পূর্ণ প্যানেল ৷ ফলে অযোগ্যদের পাশাপাশি চাকরি গিয়েছে যোগ্য শিক্ষকদেরও ৷ তাই নিয়েই আক্ষেপ ধরা পড়ল অনেকের কথায় ৷ এ জন্য অবশ্য রাজ্য ও কমিশনকেই দুষেছেন চাকরি বাতিল হওয়া যোগ্য প্রার্থীদের একাংশ ৷ আদালতের রায়ে মানবিক কারণে সোমা দাস নামে একমাত্র যে শিক্ষকের চাকরি রয়েছে, তিনিও সহমর্মিতা জানিয়েছেন সেই যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি, যাঁরা আদালতের রায়ে অযোগ্যদের মতোই চাকরি খোয়াতে চলেছেন ৷
চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সোমবার ছিল স্মরণীয় দিন। দীর্ঘ 1135 দিনের অপেক্ষা়র পর এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । সেই রায়ে বলা হয়, 2016 সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল । চাকরি যাবে 25,753 জনের ৷ শুধুমাত্র ছাড় দেওয়া হয় সোমা দাসকে । ক্যানসারে আক্রান্ত সোমাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । পরে চাকরি পান সোমা । মানবিক কারণে সোমা দাসের চাকরি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট । যার ফলে সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ 2016 সালের পুরো প্যানেলের চাকরি বাতিল করলেও চাকরি যায়নি সোমা দাসের ৷ এই রায় অপ্রত্যাশিত ছিল সোমার কাছে ৷
ইটিভি ভারতকে সোমা বললেন, "আশা করিনি সবার মধ্যে থেকে শুধুমাত্র মানবিক দিক থেকে আমার চাকরিটা থেকে যাবে । আমাদের আন্দোলনের মূল কথা ছিল দুর্নীতি । দুর্নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা লড়াই করছিলাম ।"
তবে গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ায় অনেক যোগ্য প্রার্থীরও চাকরি গিয়েছে বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সোমা ৷ তিনি বলেন, "এই প্যানেল বাতিলের ফলে যোগ্য অনেকের চাকরি বাতিল হল । তাঁরা অথৈ জলে পড়ে গেলেন । আদালতের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, যোগ্য যাঁরা চাকরি করছিলেন তাঁদের যেন কোনও অসম্মান করা না-হয় । তাঁরা যেন আবার সসম্মানে নিজেদের চাকরিটা পান । এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হলেও, মনে হয় না আমার সহযোদ্ধাদের চাকরি পেতে বেশি দেরি হবে ।"
যোগ্য হয়েও চাকরি গিয়েছে যাঁদের, তাঁদেরই অন্যতম প্রিয়াঙ্কা সাউ ৷ দীর্ঘ আন্দোলনের পর নিজের যোগ্য জায়গায় স্থান পেয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু 2016 সালের সম্পূর্ণ প্যানেলকে হাইকোর্ট বাতিল করে দেওয়ায়, তাঁর চাকরিও গিয়েছে । আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন যে, অযোগ্যদের সরাতে ফের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে তিনি প্রস্তুত ৷ তবে যোগ্যদের চাকরি যাওয়ার দায় স্কুল সার্ভিস কমিশন ও রাজ্য সরকারের উপরই ঠেললেন প্রিয়াঙ্কা ৷
ইটিভি ভারতকে প্রিয়াঙ্কা বলেন, "যোগ্যদের চাকরি চলে যাওয়ার পিছনে দায়ী কমিশন ও রাজ্য সরকার । চাকরি চলে গেলে কারও আনন্দ হয় না ৷ স্বাভাবিকভাবে আমারও হচ্ছে না । কিন্তু অযোগ্যদের পুরোপুরি সরানোর জন্য আমরা যোগ্যরা আরও একবার প্রমাণ দিতে রাজি আছি । আদালতকে প্রশ্ন করার ধৃষ্টতা আমার নেই ৷ কিন্তু সরকার বা কমিশন কেন একবারও আদালতে জানাল না যে, কারা যোগ্য ?"
আদালতের রায়ে যোগ্যদের চাকরি যাওয়া নিয়ে উষ্মা ধরা পড়েছে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের গলাতেও ৷ তাঁদেরই একজন আবু নাসের বলেন, "অযোগ্যদের পাশাপাশি বেশ কিছু যোগ্যরাও চাকরি করছিলেন । তাদের মধ্যে বহুজনের বাড়ির অবস্থা আমাদেরই মতো । কিন্তু এই যে নির্দেশ এল এর ফলে সকলের চাকরি বাতিল হল । এটা আমরা কখনওই চাই না । আমরা চাই যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি করুক ।"
আরও পড়ুন: