কলকাতা 28 ফেব্রুয়ারি: ফেরার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা নিয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানায়, ইডির উপর হামলার ঘটনায় সিবিআই ও পুলিশের যৌথ সিট গঠনে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত ৷ তবে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি ৷ এর আগে 26 ফেব্রুয়ারিও এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানিয়েছিলেন, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ নেই ৷
এরপর 28 ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি আরও পরিষ্কার করে নির্দেশ দিলেন, সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতাকে রাজ্য পুলিশ তো বটেই, এমনকী ইডি বা সিবিআই- যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে ৷ গত 5 জানুয়ারি থেকে পলাতক শেখ শাহজাহান ৷ এদিন ইডির একটি দল তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গেলে আধিকারিকদের উপর চড়াও হয় স্থানীয়রা ৷
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বলেন, "গ্রেফতার তদন্তের একটা অংশ ৷ ফলে তদন্তে স্থগিতাদেশ মানেই তো কাউকে গ্রেফতার করা যায় না ?" এর উত্তরে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, "আমরা পরিষ্কার জানিয়েছি, শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ নেই ৷ কোনও একজন জনপ্রতিনিধি বলেছেন আদালত গ্রেফতারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ৷ আদালত এখানেই পরিষ্কার আগেই জানিয়েছে, তদন্তে স্থগিতাদেশ থাকতে পারে ৷ কিন্তু গ্রেফতারে নিষেধাজ্ঞা নেই ৷ গত 7 ফেব্রুয়ারি তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁকে গ্রেফতারে পুলিশের কোনও বাধা নেই ৷" বুধবার ফের নির্দেশে জানালেন প্রধান বিচারপতি ৷
ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, "ইডির কাছে খবর আছে শাহজাহানের নামে অন্তত চারটি কেস রয়েছে, যেখানে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও রয়েছে ৷ কিন্তু সেই চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁকে পলাতক বলে দেখানো হয়েছে ৷"
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, "তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজ্য পুলিশ গুলিয়ে দিতে পারে ৷ পুলিশের উপর ভরসা নেই ৷ তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হোক ৷ মামলা পুনরায় পুরো শোনা হোক ৷" তখন ইডির আইনজীবী ধীরজ বলেন, "মোট 43টা এফআইআর দায়ের হয়েছে ৷ কতগুলি মামলায় সে পলাতক ?" এজি তখন পালটা জিজ্ঞাসা করেন, "সিবিআই, ইডি-ও তো তাকে গ্রেফতার করতে পারে ?" প্রধান বিচারপতি এর উত্তরে বলেন, "হ্যাঁ, প্রয়োজনে আমরা নির্দেশের এই অংশ সংশোধন করে দিচ্ছি ৷ প্রায় দু'মাস (57 দিন) ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৷ এখন সংবাদপত্রে দেখতে পাচ্ছি সাধারণ মানুষের জমি ফেরত দেওয়া হচ্ছে ৷"
আজ সকালে শাহজাহান শেখের গ্রেফতারি সংক্রান্ত নির্দেশের সংশোধন চায় রাজ্য ৷ প্রধান বিচারপতি জানান আজই শুনানি হবে ৷ রাজ্যের বক্তব্য ছিল, ইডি আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল তার উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছেন আগেই ৷ তারপর গত সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এক নির্দেশে জানিয়েছেন শাহজাহান শেখের গ্রেফতারিতে কোথাও স্থগিতাদেশ দেওয়া নেই ৷ রাজ্যের বক্তব্য, তদন্তের উপরই যেখানে স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছেন প্রধান বিচারপতি, সেখানে রাজ্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে কী করে ? নির্দেশের এই অংশের সসংশোধন প্রয়োজন ৷ আদালত আজ আরও পরিষ্কার করে নির্দেশ দিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: