কলকাতা, 2 অগস্ট: এই আর্ট গ্যালারিতে পাখির পালক, নারীর মুখ, গাছের পাতা, পাহাড়ি রাস্তা সবকিছুই স্পর্শ করে অনুভব করতে হয় । তাহলেই সেগুলি চোখের সামনে ফুটে উঠবে । আনন্দপুরে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে দৃষ্টিহীনদের জন্য খুলেছে ব্রেইল আর্ট গ্যালারি ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, "অন্ধজনে দেহ আলো মৃতজনে দেহ প্রাণ।" আমাদের কাছে তাঁদের দৃষ্টিপটে আঁধার থাকলেও পড়াশোনা, বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ এবং প্রিয়জনের ভালোবাসা ও সাহায্যর জোরে আজ বেশিরভাগ দৃষ্টিহীন ব্যক্তিই আত্মনির্ভর । চিকিৎসকরা বলেন যে, এঁদের একটি ইন্দ্রিয়ের অভাব থাকলেও বাকি ইন্দ্রিয়গুলিকে সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি প্রখর করে দিয়েছে প্রকৃতি ৷ ঠিক যেমন তাঁদের চিন্তাশক্তি । তাই শুধুমাত্র পড়াশোনাই নয়, ব্রেইল শিক্ষার মাধ্যমে তাঁদের বিভিন্ন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর সৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা পাইয়ে দিতে আনন্দপুরের কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে শুরু হয়েছে একটি ব্রেইল আর্ট গ্যালারি ।
কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়াটিভিটির চেয়ারপার্সন রিচা আগরওয়াল জানান, এই গ্যালারির গোড়াপত্তনের সময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, এই আর্ট গ্যালারিটি সবার জন্য হবে । তবে সক্ষমদের পাশাপাশি বিশেষভাবে সক্ষমদের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হয়েছিল । এমনকি এই পুরো ভবনটিও বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তৈরি ।
তিনি আরও জানান, "গত চার বছর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়েছে এই ব্রেইল আর্ট গ্যালারি । সবেমাত্র তার সূচনা হয়েছে । তবে এখনও অনেক কিছু সংগ্রহ করা বাকি । এখনও অনেক কাজ বাকি । সবার জন্য আমাদের গ্যালারির দরজা খোলা ।"
ছবিগুলিকে ব্রেইল ভার্সানে তুলে ধরতে বিভিন্ন মিডিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে । ছবির আউটলাইন বিভিন্ন মিডিয়াম দিয়ে উঁচু করে দেওয়া হয়েছে । শুধু আউটলাইনই নয়, ছবির কিছু কিছু অংশ, যেমন পাখির ডানা বা পাহাড়ের বর্ডার বা পাতার শিরা উপশিরা কিংবা একটি মেয়ের পোশাককে উচুঁ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে দৃষ্টিহীনরা ছবিটির উপর আঙুল বোলালেই সবটা বুঝতে পারেন । অর্থাৎ একটি চিত্র বা ছবির ব্রেইল ভার্সান তৈরি করে এখানে রাখা হয়েছে । এখানে আঙুলের স্পর্শই তাঁদের দৃষ্টি হিসেবে কাজ করছে ।
এখানে বিভিন্ন চিত্র ছাড়াও রয়েছে বিশিষ্ট সব চিত্রশিল্পীদের উপর ব্রেইল আর্টের বই । সেজন্যই একে ব্রেইল লাইব্রেরিও বলা হচ্ছে ৷ এই লাইব্রেরিতে যেমন এসজি বাসুদেব, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও জি রবীন্দ্র রেড্ডির চিত্র নিয়ে রয়েছে ব্রেইল বই, তেমনই আবার এসজি বাসুদেব, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও যোগেন চৌধুরীর আঁকা ছবি নিয়ে রয়েছে টেকটাইল আর্ট বই । শুধু এই আর্ট গ্যালারিই নয়, এখন দৃষ্টিহীন, মূক বধির ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য এখানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরও হয়ে থাকে ।
আরও আলো আরও আলো, এই নয়নে প্রভু ঢালো...কবির কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই যেন উদ্দেশ্য এই ব্রেইল আর্ট গ্যালারির ৷ যার মাধ্যমে দৃষ্টিহীনরাও খুঁজে পাবে অন্য এক কল্পনার জগৎ ৷ প্রাণো ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে, খুঁজে পাবে আরও প্রাণ ৷