কলকাতা, 2 জুলাই: একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য ৷ গতকালই এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার একই সুর শোনা গেল রাজ্যের শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের গলায় । দীর্ঘদিন আগে গণপিটুনি নিয়ে কড়া বিল এনেও তা কার্যকর করতে না-পারার জন্য সরাসরি রাজভবনকেই দুষছেন তিনি । তবে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছে বিরোধীরা ৷
এদিন নির্মল ঘোষ বলেন, গণপিটুনি নিয়ে রাজ্যপাল অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাইছেন, বলছেন আক্রান্তের সঙ্গে গিয়ে সাক্ষাৎ করবেন । কিন্তু যে কাজটা সবার আগে করার দরকার ছিল, সেটাই তিনি করছেন না । বিলে সই না-করে রাজনীতি করছেন রাজ্যপাল ।
এদিন নির্মল ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "রাজ্যপালের কাজ তো সরকারকে সহযোগিতা করা । কিন্তু বর্তমান রাজ্যপাল সরকারকে কীভাবে বিব্রত করা যায় তারই চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই যে শপথের বিষয়টিও দেখুন, দু'জন বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে ধরনা দিচ্ছেন । হয় রাজ্যপাল নিজে এসে শপথবাক্য পাঠ করান তাঁদের । তা না-হলে যাঁর সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে তাঁকে এই দায়িত্ব দিন ৷ রাজ্যপালের পরে বিধানসভায় সর্বোচ্চ কে ! তিনি তো স্পিকার । কেন তাঁকে সেই দায়িত্ব দিচ্ছেন না । আসলে এইসবের মাধ্যমে তিনি রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন ৷"
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা সংবাদে শিরোনামে এসেছে । সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর আগে যে ভয় থাকা প্রয়োজন তা দেখা যাচ্ছে না । বরং ঘটনাক্রম যেদিকে এগোচ্ছে প্রায় প্রত্যেক দিনই দুঃখজনক হলেও এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে । এদিন রাজ্যে উদ্ভূত এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি রাজ্যপালকে দায়ী করেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ।
তিনি বলছেন, "গণপিটুনির ঘটনায় কড়া আইনের প্রয়োজন রয়েছে আগেই অনুধাবন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সে কারণেই 2019 সালে 30 অগস্ট রাজ্য বিধানসভায় যে বিল পাশ হয়েছিল, তাতে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের পর্যন্ত সংস্থান ছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, রাজভবন তাতে অনুমোদন না-দেওয়ায় এখনও পর্যন্ত সেটা কার্যকর করা যায়নি ।"
এদিন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে । তিনি বলেন, "রাজ্যপাল চাইলে বিধানসভা থেকে পাঠানো কোনও বিলে অনুমোদন না-ই দিতে পারেন, এক্ষেত্রে তিনি সংশোধনী করতে বলতে পারেন, প্রয়োজনে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন অথবা পুরোপুরি বিলটি ফিরিয়েও দিতে পারেন । কিন্তু এই পথের কোনওটিতেই হাঁটেনি রাজভবন । বরং দিনের পর দিন বিল ফেলে রাখা হয়েছে । তার ফলে আজকের দিনে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না ।"
প্রসঙ্গত, 2019 সালের 30 অগস্ট রাজ্য বিধানসভায় যে আইন পাশ করা হয়েছিল তাতে ঠিক কী বলা ছিল একনজরে দেখে নেওয়া যাক । ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং বিলে বলা হয়েছে, গণপ্রহারে কারও মৃত্যু হলে বা খুনের তাঁকে উদ্দেশে মারা হলে, দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পর্যন্ত হচে পারে । সঙ্গে এক লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানারও উল্লেখ ছিল এই বিলে । গণপ্রহারে কেউ যদি আহত হন, সেক্ষেত্রে তিন বছর জেল ও পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে বিলটিতে । একইসঙ্গে, কেউ গুরুতর আহত হলে দোষীদের 10 বছর কারাদণ্ড থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান থাকছে । অথবা, 25 হাজার টাকা থেকে 3 লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে বিলে । প্রয়োজনে একসঙ্গে দুটো শাস্তিরও বিধানও রয়েছে সেখানে ।
যদিও বিজেপি একের পর এক অসহিষ্ণুতার ঘটনা, গণপিটুনির ঘটনার জন্য রাজ্য পুলিশ এবং রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করছেন । এক্ষেত্রে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "রাজ্যে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে, গ্যাং রেপ, মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে । রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চোখে কাপড় বেঁধে গান্ধারী সেজে রয়েছেন । আজকের ঘটনা ধরলে 13টি এমন ঘটনা ঘটল । কিন্তু কেন চুপ মুখ্যমন্ত্রী ?"