বর্ধমান, 20 জুলাই: শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডের জন্য সার্টিফিকেট না-দেওয়ার অভিযোগ উঠলো বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে। অগত্যা সেই সার্টিফিকেট দিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কীর্তি আজাদ। যদিও এই বিষয়ে সৌমিত্র খাঁয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বাসিন্দা সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বছরদু'য়েক ধরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। বেঙ্গালুরুতে একটা বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর সার্জারি হয়। তাঁর একটা কিডনি বাদ যায় ৷ ফলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে জমি বিক্রি করে প্রায় সাত লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হয়েছে। এখনও কেমোথেরাপি ও ওষুধের জন্য দরকার প্রায় 1 লক্ষ 40 হাজার টাকা। কিন্তু তাঁর আর্থিক সামর্থ্য না-থাকায় গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে আবেদন করেছিলেন। তার জন্য এলাকার সাংসদের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ওই এলাকা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সেখানকার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র খাঁয়ের অফিসে যান নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলামের দাবি, সেই সময় সৌমিত্র খাঁয়ের সচিব তাঁকে জিজ্ঞাসা করে রাজনৈতিক দল করেন কি না। অভিযোগ, যখন জানা যায় সে তৃণমূল করেন, তখন তাকে বলা হয় যে তৃণমূলকে সে ভোট দিয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্য। সেই মতো তিনি বর্ধমানে তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসে যোগাযোগ করেন। সেই সময় বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ কলকাতা যাচ্ছিলেন। ফোনে ঘটনার কথা শোনার পরেই গাড়ি ঘুরিয়ে বর্ধমানে চলে আসেন। সব কিছু শুনে তিনি ওই ব্যক্তিকে সাংসদের প্যাডে সার্টিফিকেট দিয়ে দেন। সার্টিফিকেট পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নজরুল ইসলাম ৷
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, "আমি ক্যানসারের রোগী। ওষুধের জন্য কত টাকা খরচ হবে সেই বিল দেওয়া হয়েছে। কেমো আর ওষুধের জন্য যা খরচ চালাতে পারছি না, তাই একটা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন। আমি খন্ডঘোষ এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ৷ বিষ্ণুপুর লোকসভার সাংসদের কাছে গিয়েছিলাম। তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি তাই কিছু দিতে পারবে না বলে জানায়। বিষয়টি বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদকে জানাতেই তিনি পাঁচ মিনিটের মধ্যে সার্টিফিকেট দিয়ে দেন। আমি শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস করার জন্যই বিজেপি সাংসদ সার্টিফিকেট দেননি।"
বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন, "21 জুলাইয়ের জন্য কলকাতা যাচ্ছিলাম। বর্ধমান অফিস থেকে ফোনে জানতে পারি একজন ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তি এসেছেন যার একটা চিঠির প্রয়োজন আছে ৷ সেই চিঠি না-পেলে তার ওষুধ বন্ধ হয়ে যাবে। সেই খবর শুনে আমি গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে বর্ধমানের অফিসে আসি। সেখানে তাকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট দিয়ে দিই।" কীর্তি আজাদ বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সেই অভিযোগে তাঁকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে এই ধরনের আচরণ খুব লজ্জাজনক। তিনি যে দলেরই হোক না কেন তাঁকে সাহায্য করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করব এখানে কি সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও মূল্য নেই ?"