কলকাতা, 31 জুলাই: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বুধবার এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হল ৷ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যতবার বিধানসভায় বলতে উঠলেন, ততবারই ওয়াকআউট করলেন বিজেপি বিধায়করা ৷ এই নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে তরজায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ বিজেপি বিধায়কদের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু বিজেপির দাবি, ফিরহাদ ধর্ম নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাহার করতে হবে ৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফিরহাদ হাকিমের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল ৷ সেখানে তাঁকে ধর্ম সংক্রান্ত কিছু মন্তব্য করতে দেখা যায় ৷ সেই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ প্রশ্ন ওঠে, রাজ্য়ের একজন মন্ত্রী কীভাবে এমন একটি মন্তব্য করতে পারেন ? চলতি বিধানসভা নির্বাচনে এই নিয়ে বিজেপি হইচইও করে ৷ মুলতুবি প্রস্তাবও আনে ৷ সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ায় বিধানসভার অন্দরে ও বাইরে বিক্ষোভও দেখান গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা ৷
কিন্তু সেদিন বিধানসভায় ছিলেন না ফিরহাদ হাকিম ৷ বুধবার অবশ্য কলকাতার মেয়র বিধানসভায় ছিলেন ৷ প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে অ্যানুয়াল রিপোর্ট পেশের সময় তিনি বিধানসভায় বলতে ওঠেন ৷ তখন সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়কেরা । যদিও এই প্রস্তাবে মন্ত্রীর জবাবের পরই আবার বিধানসভা কক্ষে ফিরে আসেন তাঁরা ।
এরপর দৃষ্টি আকর্ষণী পর্বেও একই ঘটনা ঘটে ৷ বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন প্রশ্ন করার পর ফিরহাদ হাকিম এর জবাব দিতে ওঠেন ৷ তখনও বিধানসভা থেকে আবার বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়করা । এই ঘটনা নিয়ে বিধানসভার মধ্যে শাসকদলের বিধায়করাও ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । বিশেষ করে শাসকদলের মহিলা বিধায়কেরা দাবি করেন, এভাবে রাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা বিধায়ককে অপমান করা যায় না ।
এরপরই এই নিয়ে মুখ খোলেন রাজ্যে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘এভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে অপমান করা যায় না । আপনারা যা করছেন, তা পরিষদীয় রীতিনীতির পরিপন্থী ।’’ তিনি বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘বিধানসভায় এমন আচরণ করবেন না, যা সদনের গরিমাকে ক্ষুন্ন করে ।’’ এর জবাবে শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে ।’’
এরপরেও শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষই এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন । এই নিয়ে বাদানুবাদ চলে, সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় । গোলমাল বাধে সভায় । এরপর পাকাপাকিভাবে সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান বিজেপির সদস্যরা । বিরোধী দলের দাবি, বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, না হলে ফিরহাদ হাকিমের কথা শোনা হবে না ।
এর পালটা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ধর্মীয় সভায় যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা নিয়ে এই সদনে আলোচনা হবে না । ধর্মীয় সভায় যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে রাজনীতি বা সমাজনীতির কোনও যোগ নেই । আমি ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলাম, ধর্মনিরপেক্ষই থাকব । জীবনের শেষ শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা রুখব ।’’
এ দিন এই ঘটনায় করা সমালোচনা করেছেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পরিষদীয় জীবনে এই ধরনের অসভ্যতা দেখিনি । গত তিন বছরে কারণে-অকারণে এদের বিধানসভা থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখেছি । এমনটা চলতে থাকলে আগামিদিনে বিজেপি রাজ্য থেকে জিরো হয়ে যাবে ।’’