কাঁথি, 6 সেপ্টেম্বর: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে রাজ্যে ৷ সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো করে 9 অগস্টের সেই নৃশংস ঘটনার বিচারের আশায় রোজ পথে নামছেন ৷ প্রতিবাদ করছেন সমাজের বুদ্ধিজীবীর শ্রেণির মানুষরাও ৷ যদিও তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা একটু আলাদা ৷ রাজ্য সরকারের তরফে পাওয়া পুরস্কার ফেরত দিয়ে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন তাঁরা ৷ শিক্ষক দিবস উদযাপনের দিনই 'শিক্ষারত্ন' ফেরালেন কাঁথি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অরূপ দাস ৷
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কাঁথিতে ৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির অন্য নেতারা ৷ অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষকদের হাতে সংবর্ধনা তুলে তাঁদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি ৷ সেখানেই শুভেন্দু জানান, পুরস্কার ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অরূপ ৷ শুভেন্দু বলেন, "আমাদের উচ্চবিদ্যালয় 160 বছরের পুরনো ৷ এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপ কুমার দাস একজন কৃতি শিক্ষক ছিলেন । তিনি আজকের এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে 2011 সালে রাজ্য সরকারের দেওয়া শিক্ষারত্ন পুরস্কার ফেরালেন । এর আগে আলিপুরদুয়ারের প্রধান শিক্ষক এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব চন্দন সেন ও তাদের পুরস্কার ফিরিয়েছেন ।"
সেই সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, "ছাত্র ছাত্রীর সফলতায় শিক্ষক গর্বিত হন । আজ যে মেয়েটিকে মারা হয়েছে, তাঁর শিক্ষকরাও তাঁকে নিয়ে গর্বিত ছিলেন । একটা সুশোভিত পল্লবীত বটবৃক্ষ এই রাজ্য সরকার নষ্ট করল । সবাই তো বিনীত গোয়েলের মতো মেরুদণ্ডহীন নয় । মেদিনীপুর সব সময় মেরুদণ্ড সোজা করে চলে । সুতরাং মেদিনীপুর এবং কাঁথির মানুষজন সব সময় আত্মসম্মান বজায় রেখে চলেন ।"
অরূপ দাস দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক ৷ দীর্ঘদিন কাঁথি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি ৷ চাকরি জীবনে থাকাকালীন 2011 সালে তাঁকে 'শিক্ষারত্ন' পুরস্কারে সম্মানিত করে রাজ্য সরকার ৷ বৃহস্পতিবার সেই পুরস্কার ফেরত দেন তিনি ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাকে একজন শিক্ষক হিসেবে এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল । একজন শিক্ষকের কাজ সমাজ গঠন করা । আর আমি দীর্ঘদিন ধরে কাঁথি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলাম । সেই সময় সরকার পরিবর্তন হয় ৷ 2011 সালে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকারের তরফে 'শিক্ষারত্ন' পুরস্কার দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল । প্রথম বছরই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে আমাকে দেওয়া হয়েছিল সেই সম্মান ৷"
এরপরই তিনি বলেন, "বর্তমান সময় যা দেখা যাচ্ছে, এই সরকার সমাজবিরোধীদের সুরক্ষা দিয়ে চলেছে । কোনও এক শিক্ষক দিবসে আমাকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল । আজ এই শিক্ষক দিবসের দিনে আমি এই সম্মান ফিরিয়ে দিলাম । দাবি একটাই, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং আরজি কর কাণ্ডে উপযুক্ত দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করা । যতক্ষণ না মূল আসামীরা সাজা পাচ্ছে, ততক্ষণ এই রাজ্যের সরকারের কাছ থেকে কোনও সম্মান কাছে রাখাটা ঠিক নয় ৷"