গঙ্গাসাগর, 1 ডিসেম্বর: গঙ্গাসাগরের আড়াই কিলোমিটারের ঢালাই রাস্তা তৈরি করতে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর ও মথুরাপুর সাংসদ তহবিল, দুই জায়গা থেকেই টাকা খরচ ৷ আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলল বিরোধী দল বিজেপি ৷ ঘটনা দক্ষিণ 24 পরগনার গঙ্গাসাগরের রামকরচক পঞ্চায়েতের ৷ যদিও, দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করেছেন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা ৷ পালটা বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেবেন ৷
উল্লেখ্য, 2018 সালে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় রামকরচক পঞ্চায়েতের কৃষ্ণনগর গান্ধি বাজার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয় ৷ 2020 সাল নাগাদ দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয় ৷ তারপর সেখানে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তহবিলে রাস্তা তৈরি হয়েছে, এমনটা উল্লেখ করে একটি ফলক বসানো হয় ৷
সেই ফলকে লেখা ছিল, কৃষ্ণনগর গান্ধি বাজার থেকে অনিল ওঝার বাড়ি পর্যন্ত কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে ৷ সম্প্রতি সেখানেই আরও একটি ফলক বসানো হয় ৷ সেই ফলকে লেখা, "মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদারের সংসদ তহবিলের টাকায় মহামায়া এসএসকে হইতে গৌতম পুরকাইতের বাড়ি পর্যন্ত কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে ৷" যেখানে রাস্তা তৈরির সময় উল্লেখ করা হয়েছে, 2024-25 ৷
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজেপির অভিযোগ, কীভাবে একই রাস্তার জন্য রাজ্য সরকারের সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ, আবার কেন্দ্রের সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ হতে পারে ! স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের তরফে সাংসদ তহবিলের প্রায় 30 লক্ষ টাকা চুরি করা হয়েছে ৷ সেই চুরি ধামাচাপা দিতেই সাংসদ তহবিলের টাকায় এই রাস্তা তৈরি হয়েছে বলে ফলক বসিয়েছে শাসকদল ৷
এ নিয়ে বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার হ্যান্ডলুম ও ওয়েবার সেলের আহ্বায়ক অরুণাভ দাস বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস উন্নয়ন করবে, আর চুরি করবে না, তা হতে পারে না ৷ 2018-2020 সালে একটি রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তরফে ফলকও পড়ে গিয়েছে ৷ আর বর্তমানে আমরা কী দেখছি, মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার তিনি নাকি সেই রাস্তা তৈরি করিয়েছেন ৷ তাঁর নামে সেখানে আবার ফলক বসেছে ৷ এ তো দিনে দুপুরে ডাকাতি ৷"
যদিও, এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা ৷ তিনি বলেন, "কৃষ্ণনগর গান্ধি বাজার থেকে গৌতম পুরকাইতদের বাড়ি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ৷ যার মধ্যে 2018 সাল থেকে 2020-র মধ্যে কৃষ্ণনগর গান্ধি বাজার থেকে মহামায়া এসএসকে পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তার কাজ করা হয়েছিল ৷ সেখানে টাকা খরচ করেছে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ৷"
বাকি প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে মন্ত্রীর দাবি, "পরবর্তী সময়ে হাফ রাস্তার কাজ বাকি থাকায় এলাকার মানুষ আমার কাছে আবেদন করে ৷ আমি সেই সময় বিডিও-র সঙ্গে কথা বলি ৷ তাঁকে জানাই, আপনি কাজটা শুরু করুন ৷ রাস্তা তৈরির টাকা সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ, নয়তো সাংসদ তহবিল থেকে খরচ করা হবে ৷ বিডিও পরবর্তী সময়ে সাংসদ তহবিলের টাকা পাশ হওয়ায়, সেই টাকা দিয়েই বাকি রাস্তা তৈরি করিয়েছিলেন ৷"
বঙ্কিম হাজরার দাবি অনুযায়ী, মহামায়া এসএসকে থেকে গৌতম পুরকাইতের বাড়ি পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে রাস্তা তৈরির কাজ হয়েছে মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদারের সংসদ তহবিলের টাকায় ৷ এরপরেই তিনি বলেন, "যে অভিযোগ করা হয়েছে, আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি ৷ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আমি বিধানসভায় মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেব ৷"
যদিও, স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই রাস্তা 2020 সালেই পুরোপুরি কাজ হয়ে গিয়েছিল ৷ সেখানে নতুন করে কোনও কাজ হয়নি ৷ এ নিয়ে গঙ্গাসাগরের বিডিও কানাইয়া কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ইটিভি ভারতের তরফে ৷ তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে ৷ তবে, সেই রাস্তা তৈরির টাকার অনুমোদন করেছিলেন গঙ্গাসাগরের আগের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল ৷ ফলে তিনি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ৷