ভদ্রেশ্বর, 7 মার্চ: যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ ৷ এই শব্দগুলি শুনলেই আতঙ্ক গ্রাস করে আমাদের ৷ আর যে সমস্ত শিশুরা এর শিকার হয় তারা অচিরেই সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় ৷ এহেন পরিস্থিতিতে ওদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে ওঠে ৷ এই ছোট ছোট মুখগুলির চ্যালেঞ্জিং জীবন দেখে ওদের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন ভদ্রেশ্বরের পায়েল রায় ৷ শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি রীতিমতো ফিল্ডে নেমে ওদের জন্য আইনি ও আর্থিকভাবে লড়তে শুরু করেন ৷ গড়ে তোলেন 'সহজপাঠ' ৷
চ্যালেঞ্জের কাজ বরাবরই টানে পায়েলকে ৷ সেই থেকেই শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য কাজ করার ইচ্ছে ৷ পরিবারে বাবা ছাড়াও তিন বোন তাঁরা । বছর 29-এর পায়েলের পড়াশোনা শিশুদের অধিকার ও আইন নিয়ে ৷ ভদ্রেশ্বরের ধর্মতলা গার্লস স্কুল থেকে পড়াশোনা করে উত্তরপাড়া প্যারিমোহন কলেজে বাংলায় স্নাতক হন পায়েল ৷ কলকাতায় 2 বছর চাকরির সুবাদে সেখানকার পথ শিশুদের দুর্দশা তাঁর মনকে নাড়া দেয় । সেখানে থেকেই অবহেলিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা আরও প্রকট হয় ৷ তারপর 2016 সালে তাঁরা তিন বন্ধু মিলে 'সহজপাঠ' নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তোলেন ৷ আগামী দিনে পায়েলের ইচ্ছে বীরভূমের প্রান্তিক এলাকায় পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে স্কুল করার ।
চন্দননগরের প্রবর্তক আশ্রম ও কোন্নগর অনাথ আশ্রম-সহ বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু হয় । চাকরি ছেড়ে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে পড়াশোনা টাটা ইনস্টিটিউট সোশাল সায়েন্সে । এরপরই চাইল্ড লাইনে সঙ্গে যুক্ত হন 2021 সালে । তারপর থেকেই এক সংস্থার মাধ্যমে ছত্তিশগড়, গয়া ও দিল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গায় বাল্যবিবাহ ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে একাধিক প্রোজেক্টে কাজ করা শুরু করেন পায়েল ।
এরপর ইটভাটা ও বিভিন্ন স্টেশনের পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা শুরু । তাদের পড়াশোনা, খাওয়া ও জামাকাপড় দেওয়ার দায়িত্ব নেন পায়েল । এই কাজে বহু সহৃদয় মানুষকে পাশে পান তিনি ৷ 2022 সালে বসিরহাটে নাবালিকা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কাজ করার সময় বহু বাধা আসে ৷ এছাড়াও মালদা, নৈহাটি ও শান্তিনিকেতনের মতো শহরে 10 থেকে 14 বছর বয়সি নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে লড়াই করছে । বর্তমানে চারজন নিগৃহীতা যুবতিকে আইনি ও পড়াশোনায় সাহায্য করা হচ্ছে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ।
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য 2022 সালে বোকারো কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন পায়েল ৷ 6 মাস আগে উত্তরপাড়া জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের আইনজীবী শুভদীপ নাথের অধীনে জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে কাজে যুক্ত হন পায়েল । তাঁর লড়াই শিশুদের উপর পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে । শিশুদের যৌন নির্যাতনে অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায় সেই চেষ্টা করবেন ।
পায়েলের কথায়, "ধর্ষণ কথাটা শুনলে আমরা সবাই খুব ভয় পাই । আর শিশুরা এর শিকার হলে সেটা আরও চ্যালেঞ্জের হয়ে যায় । তাই সেই সমস্ত শিশুদের পড়াশোনা ও সুরক্ষার জন্য কাজ শুরু করি । নিজের জেলা ও অন্যান্য রাজ্যেও কাজ করি । পশ্চিমবঙ্গে চারটি শিশুর ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে । তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করছি । আগামী দিনে শান্তিনিকেতনে আদিবাসী ও দুঃস্থ শিশুদের পড়াশোনার জন্য স্কুল খোলার চিন্তাভাবনা আছে । আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় একজন চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংবাদিক রয়েছেন । তাঁরা আমাকে প্রচণ্ডভাবে সাহায্য করে । শিশুদের সুরক্ষা মানে আইনের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । সেইজন্যই আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ।"
অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে 8 বছর ধরে ওদের জন্য কাজ করে চলেছেন পায়েল ৷ লক্ষ্য একটাই, নির্যাতনের শিকার শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো ৷
আরও পড়ুন :