শিলিগুড়ি, 4 নভেম্বর: হতাশ বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ । কারণ তারা জানতে পেরেছে যে, বেঙ্গল সাফারি পার্কের সিংহী তনয়া গর্ভবতী ছিল না । 'সিউডো প্রেগনেন্সি' অর্থাৎ হরমোনজনিত কারণে সিংহী তনয়াকে গর্ভবতী বলে মনে হয়েছিল । পরে সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময়ের কাছে পৌঁছতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, ওই সিংহী গর্ভবতী নয় । আর এটা বুঝতে পেরেই হতাশ হয়ে পড়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ । তবে তারা আশা ছাড়ছে না । বাঘ প্রজননে নজির তৈরি করেছে বেঙ্গল সাফারি পার্ক । আগামীতে সিংহ প্রজননেও তারা জোর দিচ্ছে ।
দেশের মধ্যে বাঘ প্রজননে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক । এর পরে তারা নজর দেয় সিংহ প্রজননে ৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রিপুরার সিপাহিজালা চিড়িয়াখানা থেকে একজোড়া সিংহ দম্পতি সুরজ ও তনয়াকে নিয়ে আসা হয় । আনার কিছু দিন পর থেকেই তনয়ার মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন পার্কের আধিকারিকরা ।
যেহেতু ত্রিপুরার চিড়িয়াখানাতেও একসঙ্গেই ছিল সুরজ ও তনয়া, সেই কারণে পার্ক কর্তৃপক্ষ মনে করে, তনয়া সম্ভবত গর্ভবতী । তার শারীরিক পরিবর্তনও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছিল । সব দিক দেখার পর মনে করা হয়, অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে তনয়ার । কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা করে জানা যায়, আসলে তনয়ার সিউডো প্রেগনেন্সি হয়েছিল ।
এই বিষয়ে রাজ্যের চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী ইটিভি ভারতকে বলেন, "আপাতদৃষ্টিতে প্রথমে তনয়াকে গর্ভবতী মনে হয়েছিল । গর্ভবতী হলে যেসব শারীরিক পরিবর্তন হয়, তার মধ্যে সেসব লক্ষণ দেখা গিয়েছিল । সেইমতো তার দেখাশোনাও করা হয় । আমরাও খুব গুরুত্বের সঙ্গে তাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম । পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তনয়া গর্ভবতী নয় । হরমোনজনিত কারণে তাকে গর্ভবতী মনে হচ্ছিল ।"
সাফারি পার্কের অধিকর্তা বিজয় কুমারের কথায়, "তনয়া গর্ভবতী নয় । সেটা পরিষ্কার । তনয়ার সিউডো প্রেগনেন্সি হয়েছিল । যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় মিথ্যা গর্ভধারণ ৷ তবে আমরা আশাবাদী, বাঘের মতো সিংহ প্রজননেও আগামীতে আমরা সাফল্য পাব ।"
উল্লেখ্য, সিউডো প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রাণীর শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোজোস্টেরন হরমোন নির্গমন হলে তা জরায়ুতে থাকা কর্পাস লিউটিয়াম নামে এক গ্রন্থিকে সক্রিয় করে । এতে ওই স্ত্রী প্রাণীর মধ্যে গর্ভধারণ করলে যেসব পরিবর্তন হয় হুবহু সেইসব লক্ষণ ফুটে ওঠে । যেমন বেশি বিশ্রাম নেওয়া, স্তন ফুলে যাওয়া, মাটি খোরা, খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে খাবার না খাওয়া ইত্যাদি ৷ কুকুর, বিড়াল বা এই ধরনের প্রাণীদের ক্ষেত্রে সিউডো প্রেগনেন্সি এক মাসের মতো থাকে । কিন্তু বন্য প্রাণীদের মধ্যে এই সিউডো প্রেগনেন্সি তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারে । প্রোজোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে শরীর ৷ আর তনয়ার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ ধরা পড়েছিল । যেকারণে তাকে গর্ভবতী বলে মনে করেছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ ।