কলকাতা, 17 মার্চ: সন্দেশখালিতে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে যে জমিগুলি বেআইনিভাবে দখল করে মাছের ভেরিতে পরিণত করা হয়েছিল, সেই জমিগুলির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ কীভাবে সেই জমিগুলিকে পুনরায় ব্যবহার করা যায় তার উপায়ও বাতলাবে এই দল ৷ রাজভবনের এক আধিকারিক সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে ৷
এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা পিটিআই-কে বলেছেন যে, ধৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর আসল মালিকদের কাছে ফিরে আসা কৃষিজমির উপরের মাটি মাছচাষের জন্য লবণাক্ত জল নিষ্কাশনের কারণে কৃষির অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, এবং সেই জমিগুলিকে আবার চাষের উপযোগী করার জন্য উপরের মাটি সরিয়ে ফেরা প্রয়োজন ৷ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কৃষির পরিবর্তে মৎস্য চাষ হবে 'অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর বিকল্প'।
রাজ্যপাল তাঁর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সময়, ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদে গিয়েছিলেন এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি । এরপর তিনি একটি কমিটি গঠন করেন, যার মধ্যে রয়েছে কৃষি, সহযোগিতা ও কৃষক কল্যাণ বিভাগের প্রাক্তন সচিব এসকে পট্টনায়ক এবং একজন এফএও বিশেষজ্ঞ ৷ তাঁদের এই বিষয়টি অধ্যয়ন করতে এবং সন্দেশখালির জমি ব্যবহারের উপায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে ।
রাজভবনের আধিকারিক বলেন, "এখনও পর্যন্ত দখলমুক্ত জমির 250 টিরও বেশি প্লট আসল মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কৃষিজমির বিস্তীর্ণ অংশ দুই থেকে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মাছের ভেরির লবণাক্ত জলের নীচে ডুবে ছিল, যার ফলে উপরের মাটির অনেক ক্ষতি হয়েছে । লবণের একটি স্তর সেই জমিগুলিতে পরতের মতো রয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে পরবর্তী পাঁচ থেকে দশ বছর ওই জমিতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না ৷ স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ মেয়াদে সন্দেশখালির মানুষ এবং জমির ভাড়া কীভাবে চলছে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে । অত্যাচারীদের ত্রাস থেকে জনগণের বেরিয়ে আসতে যেমন সময় লাগবে, তেমনই জমির আগের চরিত্র ফিরে পেতেও সময় লাগবে ৷ সমাজ এবং সরকারকে অবশ্যই তাঁদের আস্থা ফিরে পেতে এবং তাঁদের সঠিক জায়গা খুঁজে পেতে তাঁদের হাত ধরতে হবে ৷"
জমির অবস্থা সম্পর্কে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর চিত্তরঞ্জন কোলে বলেন, "উপরের মাটি কৃষিজমির সবচেয়ে উর্বর অংশ এবং এতে জৈব পদার্থ ও অণুজীবের সর্বাধিক ঘনত্ব রয়েছে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷ উত্তর 24 পরগনা জেলার সন্দেশখালির জমি নোনা জলের কারণে উপরের সেই স্তরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটি প্রতিস্থাপন করা দরকার । একটি জমি লবণাক্ত জলের নিচে যত বেশি সময় থাকবে, তাকে পুনরুজ্জীবিত করতে তত বেশি সময় লাগবে । নিয়ম হল যে, যদি একটি জমি এক বছর ধরে লবণাক্ত জলের নিচে থাকে, তাহলে তা পুনরুদ্ধার করতে দুই বছর সময় লাগবে ৷"
আরও পড়ুন: