বেলঘরিয়া, 1 ডিসেম্বর: বাংলাদেশে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন বেলঘরিয়ার যুবক ৷ আহত অবস্থাতেই ওই যুবক দেশে ফিরেছেন ৷ আক্রান্তের নাম সায়ন ঘোষ ৷ তবে, বাড়ি ফিরে এলেও এখনও তাঁর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ সায়ন কেমন আছেন, খোঁজ নিতে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করছেন প্রতিবেশীরা ৷
জানা গিয়েছে, বছর বাইশের সায়নের বাড়ি উত্তর 24 পরগনার বেলঘরিয়ার সোনার বাংলা এলাকায় ৷ গত 23 নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৷ পাসপোর্ট ও ভিসা-সহ সমস্ত বৈধ কাগজপত্র ও টিকিট কেটেই প্রতিবেশী দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সায়ন ৷
গত 25 নভেম্বর বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মগুরু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস প্রভুকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে ৷ তারপর থেকেই সে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও লুঠতরাজ শুরু হয়েছে ৷ বেনজির ভাবে আক্রমণ নেমে আসে সংখ্যালঘুদের উপর ৷ সেই হামলার হাত থেকে রক্ষা পাননি বেলঘড়িয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষ ৷
সায়ন জানিয়েছেন, 26 নভেম্বর তিনি বন্ধুর বাড়ির পাশে ঢাকা শহরের এক বাজারে কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন ৷ অভিযোগ, সেখানেই কয়েকজন সায়ন এবং তাঁর বন্ধুকে ঘিরে ধরেন বলে অভিযোগ ৷ তাঁদের নাম-পরিচয় জানতে চাওয়া হয় ৷ সায়ন ভারতীয় এবং হিন্দু জানতে পেরে, তাঁর উপর হামলা চালানো হয় ৷ তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় ৷ সায়নকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বন্ধুও আক্রান্ত হন ৷ সায়নকে ছুরি দিয়েও আঘাত করা হয় ৷ তাঁর কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ৷
সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সায়নকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ চিকিৎসা করিয়ে নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন সায়ন এবং তাঁর বন্ধু ৷ কিন্তু, বাংলাদেশ পুলিশ কোনও রকম সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ ৷ বরং, কেন তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ? তা নিয়ে একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত করে তোলা হয় তাঁকে ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে সায়নের বন্ধুকে বলা হয়, তিনি যেন ভারতীয় যুবককে তাঁর বাড়িতে থাকতে না দেন ৷ পরিস্থিতি আঁচ করে এবং নিজেদের ও সায়নের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁর বন্ধুর পরিবারের সদস্যরাও সায়নকে ভারতে ফিরে আসার পরামর্শ দেন ৷
রবিবার সকালেই সায়ন বাড়ি ফিরে এসেছেন ৷ দেশে ফিরে তাঁর উপর হওয়া হামলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে ৷ তিনি বলেন, "ভারতীয় পরিচয়, আর আমার নাম সায়ন ঘোষ জানার পরেই, কয়েকজন আমার উপর হামলা চালায় ৷ বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে কোনও রকম সহযোগিতা পাইনি ৷ উলটে আমাকেই থানায় নানারকম অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিব্রত করে তোলা হয়েছিল ৷"
এদিকে, ঘটনার পর থেকে চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট সায়নের ৷ কথা বলতে গিয়ে, বারবার তাঁর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল ৷ স্পষ্টত বোঝাই যাচ্ছিল, ঘটনার জেরে কতটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বেলঘরিয়ার সায়ন ঘোষ ৷