বারাসত, 14 জুলাই: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই সার ! বারাসতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দখল করে রমরমিয়ে চলছে বাজার, দোকানপাট । যার ফলে বাধা পাচ্ছে পরিষেবার উন্নয়ন । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও এনিয়ে প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ । এই পরিস্থিতিতে উন্নত পরিষেবার স্বার্থে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি জমি দখলমুক্ত হোক । চাইছেন বারাসত পৌরসভার পৌর পারিষদ অরুণ ভৌমিক। তবে, অবৈধ দখলদারদের বিকল্প পুনর্বাসনেরও দাবি করেছেন শাসকদলের এই কাউন্সিলর ।
বারাসতের নবপল্লী বয়েজ স্কুলের ঠিক পাশে রয়েছে পৌরসভার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি । দিনদিন রোগীর চাপ বাড়ায় বর্তমানে সেটি উন্নীত হয়েছে মাতৃসদন এবং পলি ক্লিনিকে । এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নে স্থানীয় সাংসদ তথা চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সাংসদ তহবিলের 50 লক্ষ টাকাও রয়েছে ।তবে, এতকিছুর পরেও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ দখলদার । যারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি জমির বেশিরভাগটাই দখল করে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে ।
জানা গিয়েছে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরসভার অন্তত 14 কাঠা জমি রয়েছে । যার মধ্যে সর্বসাকুল্যে সাড়ে তিন কাটা জমির উপর গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি । বাকি জমি চলে গিয়েছে অবৈধ দখলদারদের দখলে । শুধু দখলদার বললে ভুল হবে ! পুরসভার সেই জমিতেই গড়ে উঠেছে আস্ত একটা বাজার । একদিন, দু-দিন নয় ! পুরসভার এই সরকারি জমি দখল করে দিনের পর দিন বহাল তবিয়তে চলছে বেআইনি দোকানদারদের দাপট ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই সরকারি জমিতে প্রায় 50-এর কাছাকাছি দোকান রয়েছে । বাজার ধরলে সংখ্যাটা আরও বেশি । এঁদের মধ্যে কেউ ব্যবসা করছেন 10 থেকে 12 বছর ধরে । আবার কেউ তারও বেশি সময় ধরে । কিন্তু, এতদিনেও অবৈধ দখলদারদের কেন হটানো হয়নি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি থেকে ? প্রশাসনই বা কী করছে ? নাকি জল মাপছে এনিয়ে ? এমনই সব প্রশ্ন এখন বড় করে দেখা গিয়েছে ।
কিন্তু, খোদ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে সরকারি জমি জবরদখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে কীভাবে এখনও বাজার, দোকানপাট চলছে সেখানে । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর সরকারি জমি জবরদখল মুক্ত করতে বুলডোজার, জেসিবি নামানো হয়েছে রাস্তায় ।সেখানে বারাসতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা অবাকই করেছে সকলকে । এর আগেও বারাসতে সরকারি জমিতে তৃণমূলের পার্টি অফিস নিয়ে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গিয়েছিল পৌর প্রশাসনকে । পরে, খবরের জেরে পার্টি অফিসের জমি জরিপ শুরু করা হয় । তবে, এক্ষেত্রে প্রশাসনের তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি এখনও । স্বভাবতই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন !
এদিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দখলমুক্ত করে সেই জমি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবহার হলে এলাকারই উপকার হবে বলে দাবি করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ ।তবে, সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা ।
এই বিষয়ে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় নামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, "জমি থাকা সত্ত্বেও পৌরসভার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অল্প পরিসরে গড়ে উঠেছে । এখানে রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে । তাই, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিটি দখলমুক্ত করা গেলে সেটা ভালোই হবে । তাতে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়ন ঘটবে । তবে এঁরাও অনেকদিন ধরে এখানে ব্যবসা করছেন । তাঁদের যদি বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ওঁরাও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারবেন । জমি দখলমুক্ত করার পাশাপাশি এটাও ভেবে দেখা উচিত প্রশাসনের ।"
আর পৌরসভার রাস্তা বিভাগের পৌর পারিষদ অরুণ ভৌমিক বলেন, "বাম আমল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে এঁরা বসতে শুরু করে ওই জমিতে । যেহেতু জমির উপর স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়েছে, তাই উন্নত পরিষেবার স্বার্থে বাকি অংশের জমিটিরও প্রয়োজন রয়েছে । তাই, প্রশাসনকে বলব অবৈধ দখলদারদের বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে যদি তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, তাতে পরিষেবার মানোন্নয়ন ঘটবে । উপকার হবে জনগণেরই ।"
অন্যদিকে, বারাসত পুরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরুণ ভৌমিকের সদিচ্ছার প্রশংসা করেও এনিয়ে তাঁর দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র । তাঁর কথায়, "উন্নয়নের স্বার্থে জবরদখল হটানো উচিত সেটা যেমন ঠিক, তেমনই গরিব ব্যবসায়ীদের জীবিকার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত প্রশাসনের । এতদিন পর ওনার(অরুণ ভৌমিক)বিবেক জেগে ওঠায় ভালো লাগছে ।"
কিন্তু, আগে কেন উনি উদ্যোগ নেননি ? এমনটা নয় তো, জবরদখল হটিয়ে সেখানে তৃণমূল পার্টির ক্যাডারদের করে খাওয়ার জায়গা করে দেওয়া হবে ? প্রশ্ন তুলে শাসকদলকে নিশানা করেছেন গেরুয়া শিবিরের এই রাজ্য নেতা ।