বাঁকুড়া, 10 এপ্রিল: ড. সুভাষ সরকার ৷ বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ৷ এক সময়ের লালদুর্গ বাঁকুড়ায় 2019 সালে তাঁর হাত ধরেই পদ্ম ফুটেছিল ৷ এবারও তিনিই বিজেপির প্রার্থী ৷ পাঁচবছর বাম ও তৃণমূলের অনুন্নয়নই ছিল তাঁর হাতিয়ার ৷ তবে এবার তাঁকে প্রচারে রাখতে হচ্ছে নিজের রিপোর্ট কার্ডও ৷
কী বলছে সেই রিপোর্ট কার্ড ৷ সুভাষ সরকার জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে দুই বছর সাংসদ তহবিলের কোনও টাকা পাওয়া যায়নি । গত পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলে তাঁর মোট প্রাপ্ত টাকা হল 16 কোটি 66 হাজার টাকা । যার মধ্যে 28 হাজার টাকা মতো পড়ে রয়েছে বাকি সব টাকা মানুষের উন্নয়নমূলক খাতে খরচ হয়ে গিয়েছে ।
তবে তাঁর উন্নয়নের কাজ এর থেকে বেশি হতে পারত, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি ৷ সুভাষ সরকারের কথায়, তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্য প্রথম দেড় বছর কোনও কাজই করতে পারেননি । তাঁর পূর্ববর্তী তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অর্থাৎ মুনমুন সেন 2 কোটি 42 লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে রেখে চলে গিয়েছিলেন, সেটা পুনরায় আবার ফিরে এসেছে । পুরো বাঁকুড়া লোকসভা এলাকায় প্রায় 1480টি ভিন্নভিন্ন প্রজেক্ট হয়েছে ৷
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, আর কী কী কাজ করেছেন বাঁকুড়ার সাংসদ -
- কেশরায় কাটজুড়িডাঙা হল্ট স্টেশন ।
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুল, যা সারা ভারতবর্ষে মোট ছ’টি রয়েছে ।
- কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অনুমোদন বাঁকুড়াতে ।
- বাঁকুড়ার উপর দিয়ে বারাণসী কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে, যার কস্ট ভ্যালু 35 হাজার কোটি টাকা ৷
- তাঁর সংসদীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় সোলার স্ট্রিট লাইট, সৌরচালিত পানীয় জলের ব্যবস্থা, নলকূপ ইত্যাদি ব্যবস্থা করেছেন ।
- বেশ কয়েকটি সভাগৃহ ও কমিউনিটি হলের উদ্বোধন করেছেন ।
যদিও কিছু আক্ষেপও আছে বিজেপি সাংসদের ৷ কী সেই আক্ষেপ ? ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথ, দ্বারকেশ্বর-গন্ধেশ্বরী নদীবাঁধ ও ন্যাশনাল ট্রাইবাল ইউনিভার্সিটির ব্রাঞ্চ বাঁকুড়াতে না করতে পারা ৷ যদিও এর দায় তিনি চাপিয়েছেন রাজ্য সরকারের উপরই ৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণে সহায়তা না করায়, তিনি এই কাজগুলি করতে পারেননি ৷
তবে সাংসদের সমস্ত দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার চেয়ারাপার্সন অলকা সেন মজুমদার ৷ তাঁর দাবি, সুভাষ সরকার পাঁচ বছরে কোনও কাজ করেননি ৷ তাই তিনি সুভাষ সরকারের কাছে সমস্ত কাজের খতিয়ান প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল যখন কাজ করে, তখন তা মানুষ জানতে পারেন ৷ এক্ষেত্রেও মানুষের জানা উচিত ৷
বাঁকুড়ায় 1980 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়া ৷ তাঁকে হারিয়ে 2014 সালে সাংসদ হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুনমুন সেন ৷ কিন্তু 2019 সালে মুনমুনকে আর প্রার্থী করেনি তৃণমূল ৷ সেবার ওই আসনে লড়াই করেন অধুনা প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ এবার জেলার নেতা অরূপ চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে ৷ তাঁকে সামনে রেখে লালমাটির জেলায় আবার ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া তৃণমূল ৷ সেই কারণেই সুভাষ সরকারের উন্নয়নের সব দাবিকেই নস্যাৎ করে দিচ্ছে ঘাসফুল শিবির ৷
কিন্তু মানুষ কী বলছে ? তাঁরা কী সুভাষ সরকারের কাজে খুশি ? নাকি ঘাসফুলে আবার তাঁদের ভরসা ফিরতে চলেছে ! বাঁকুড়ার বাসিন্দা পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘ভালো কাজ করেছেন ৷ সবসময়ই দেখতে পাওয়া যায় ৷’’ বাঁকুড়ার আরেক বাসিন্দা সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘ভালো কাজ করেছেন ৷ তাঁকেই আবার সাংসদ হিসেবে চাই ৷’’
আরও পড়ুন: