কলকাতা, 5 অগস্ট: অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ । পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা । আর এই ঘটনায় নিজেদের জয় দেখছেন আন্দোলনকারীরা । যার আঁচ পড়েছে এপার বাংলাতেও । শেখ হাসিনা সরকার পতনের আনন্দে সোমবার বিকালে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে মিছিল বের করে বাংলাদেশিদের একাংশ । তবে নিজের দেশের এমন পরিস্থিতি শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এদেশে আসা বহু বাংলাদেশি ৷
বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে এপার বাংলায় ৷ আনন্দে মহানগরীর বুকে যে বাংলাদেশিরা মিছিল বের করেছেন তাঁদের বক্তব্য, এটা যেন তাঁদের কাছে ঈদের আনন্দ । কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা মুন্নি । তিনি মিছিলে অংশ নেওয়ার পর বলেন, "শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল । আজকে আমাদের ঈদের দিন । শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন লড়াই এবং রক্তপাতের বিনিময়ে এই জয় এসেছে । আজকে আমরা কলকাতাতে আটকে পড়লেও আনন্দে আছি । আজকে আমাদের ঈদ ।"
ঢাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গির আলম কলকাতায় ঘুরতে এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন, "আমরা সকলে খুশি । আমরা সাধারণ জনগণ খুবই খুশি যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন । আমরা অপেক্ষা করব না, চলে যাব কালকেই । আগামীতে ভালো কিছু হবে সেই প্রত্যাশাই করি । এমন সরকার হোক যারা জনগণের কথা শুনবে ।"
এদিকে চিকিৎসার জন্য কিংবা ঘুরতে আসার কারণে যাঁরা কলকাতাতে আটকে পড়েছেন তাঁরা নিজেদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ৷ কলকাতা থেকে যে সমস্ত সংস্থা কিংবা বিমান পরিষেবার মাধ্যমে বাংলাদেশে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে, তাদের অফিসের সামনে দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন ৷ কবে ঠিকভাবে দেশে ফিরতে পারবেন তা নিয়েও আশঙ্কার মধ্যে আছেন তাঁরা । অনেকে আবার গোটা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি নন ।
কলকাতায় সস্ত্রীক ঘুরতে এসেছিলেন বাংলাদেশের সৈয়দপুর জেলার বাসিন্দা রাকিব হুসেন । তিনি আজ তাঁর দেশের পরিস্থিতির কথা শুনে জানান, "তিন দিনের জন্য এসেছিলাম । গাড়ি শুনছি বন্ধ । অর্থনৈতিক দিক থেকে তিন দিনের প্রস্তুতি ছিল । এখন একটু চিন্তায় আছি । এখানে নিরাপদে আছি । দেশে ফিরতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে পারি । পরিস্থিতি আর কিছু দিন দেখে ফিরব । এখনই ফেরার পরিকল্পনা করছি না ।"
ঢাকার বাসিন্দা সৈয়দুল ইসলাম কামাল বলেন, "দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ভোট করাক । জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা দেশ পরিচালনা করুক । এখনই ফিরছি না । কিছুদিন পরিস্থিতি দেখব কোন দিকে মোড় নেয় । সেনাবাহিনী কী করে কীভাবে পরিচালনা করবে সেটা দেখে দেশে ফিরব ।"
বাবার চোখের চিকিৎসা করাতে ময়মনসিংয়ের বাসিন্দা শিমু এসেছেন কলকাতায় । তাঁর কথায়, "বাবার চিকিৎসা করাতে এসেছি । চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরব । বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চাই সুস্থ স্বাভাবিক হোক দেশ । এছাড়া নতুন সরকারের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই ।"
শ্যামলী পরিবহণ ছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত সংস্থা বাংলাদেশের পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তারাও ব্যাপক চিন্তায় পড়েছেন । ধারাবাহিকভাবে বাস পরিষেবার বিঘ্ন ঘটায় তারা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেদিকেই নজর রাখছেন তারা ৷