শিলিগুড়ি, 5 ডিসেম্বর: প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়েছে । বাংলাদেশের অস্থিরতার প্রভাব দেখা যাচ্ছে এপার বাংলাতেও । প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বহু পর্যটক উত্তরবঙ্গে এসে থাকেন । মূলত চিকিৎসা ও পড়াশুনোর কারণে ভারতে এসে থাকেন ওপার বাংলার মানুষ । আর পর্যটন মেলালে বছরে প্রায় দেড় লক্ষ বাংলাদেশের নাগরিক উত্তরবঙ্গে এসে থাকেন । কিন্তু বাংলাদেশের যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তাতে এখন কার্যত মাছি মারার অবস্থা পরিবহণ, পর্যটন ও হোটেল ব্যবসায়ীদের । সাতদিন পার হতে চলল শিলিগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে বাস চলাচল করেনি ।
- বাস পরিষেবা বন্ধ :
যাত্রী না থাকায় বাসের কাউন্টার কার্যত ফাঁকা । বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশ থেকে তেমনভাবে কেউ বাংলাদেশে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না । পাশাপাশি চিকিৎসা ও পড়াশোনার কারণ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দিচ্ছে না কেন্দ্র । এমন পরিস্থিতিতে বাস চালিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না বলে জানান ভারত-বাংলাদেশ বাস পরিষেবায় যুক্ত মালিকপক্ষ ।
একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা তাঁদের একজোড়া বাস শিলিগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে চালায় । গত অগস্ট মাসের আগেও যে বাসে যাত্রীদের ভিড় ঠাসা থাকত, সেখানে এক সপ্তাহ ধরে যাত্রী মিলছে না । দু-একজন যাত্রী হলেও তাতে গাড়ি চালানো সম্ভব না । পরিবহণ সংস্থার কাউন্টার মাল্লাগুড়ি ও জংশন এলাকায় রয়েছে । সেখানে গিয়ে দেখা যাচ্ছে খাঁ খাঁ করছে কাউন্টারগুলি ।
কাউন্টারে কর্মরত সংস্থার কর্মী শিবপ্রসাদ ঘোষ বলেন, "গত দুই সপ্তাহে দু'দিন বাসের চাকা ঘুরেছে । তাতেও যাত্রী হয়নি । শিলিগুড়ি তথা আশপাশের এলাকার বহু মানুষের আত্মীয় ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকেন । তিনজন কর্মী কাউন্টারে কাজ করি । কাউন্টার চালাতে খরচ রয়েছে । এমন চললে তো ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না । গাড়ি চালানোই সম্ভব হচ্ছে না । আর যে দু-একজন যাত্রী হচ্ছে তাতে বাস চালানো সম্ভব না ।"
বর্তমানে শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা যাওয়ার ক্ষেত্রে ওপার বাংলার মানুষ ছোট গাড়ি ভাড়া করে চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত যাচ্ছেন । আগে থেকে বাংলাদেশে গাড়ি বলে রাখছেন । সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন । দুই মাস যাবৎ এমনিতেই যাত্রী কম হচ্ছিল । সেখানে এখন আর যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না । প্রতিদিন একজোড়া বাস দু'দেশের মধ্যে চলাচল করে । দুটি পরিষেবাই বর্তমানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে । শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাস ভাড়া মাথাপিছু 1800 থেকে 2000 টাকা । ফলে এখন কর্মীদের বেতন ওঠাতেই হিমসিম খাচ্ছেন সংস্থার মালিকরা ।
- হোটেলে কমেছে ভিড় :
একই অবস্থা শিলিগুড়ির হোটেল ব্যবসাতেও । ঢাকা-সহ আশপাশের এলাকার মানুষ মূলত চ্যাংরাবান্ধা হয়ে এদেশে আসেন । হাসমি চক, মহাত্মা গান্ধি চক, জংশন, মাল্লাগুড়ি, বিধান মার্কেট এলাকার একাধিক হোটেলে বাংলাদেশ থেকে নাগরিকরা এসে থাকেন । শহরে প্রায় তিনশোরও বেশি হোটেল রয়েছে । সেগুলিও একদম আবাসিক শূন্য ৷
এই বিষয়ে গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, "বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতায়াত শিলিগুড়িতে একেবারে কমে গিয়েছে । ওপারে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে যাঁরা ভিসা পেয়েছিলেন সেই সকল মানুষেরা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসছেন । কিন্তু সেই ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ । শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বহু মানুষ এদেশে আসেন । প্রতি বছর প্রায় 30 হাজার বাংলাদেশের নাগরিক হোটেলে এসে ওঠে । গত চার মাসে সেই সংখ্যাটা সাতশোরও কম । গতকাল পর্যন্ত মাত্র 10 থেকে 12 জন বাংলাদেশী নাগরিক হোটেলে উঠেছেন।"
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যালের কথায়, "সত্যি উত্তরের পর্যটনে একটা বড় প্রভাব পড়েছে । বাস, ট্রেন সব বন্ধ । খুব জরুরিভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করা উচিৎ । অনেক প্রচেষ্টার পর ক্রস বর্ডার ট্যুরিজম শুরু হয়েছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক সেটাই চাই ।"