ETV Bharat / state

ছাব্বিশের ইউএসপি! বালুরঘাটের কুর্সি কি ফের পদ্মের, নাকি জমি ঘাসফুলের ? - Lok Sabha Election 2024

Balurghat Constituency West Bengal Lok Sabha Election 2024 Party Wise Candidates: এক সময়ের লাল-গড় বালুরঘাটে এখন উড়ছে গেরুয়া নিশান ৷ মাঝে অবশ্য ঘাসফুলের জমি তৈরি হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই জমি ধরে রাখতে পারেনি তৃণমূল ৷ এবার বিজেপির থেকে বালুরঘাট পুনরুদ্ধার করতে পারবে তৃণমূল ? নাকি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ফের জিতবেন ?

Balurghat
বালুরঘাট আসন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 22, 2024, 2:27 PM IST

বালুরঘাটের কুর্সি কি ফের পদ্মের ?

বালুরঘাট, 22 এপ্রিল: বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা দক্ষিণ দিনাজপুর ৷ ছোট্ট জেলা ৷ মাত্র ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্র ৷ তাই লোকসভা নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রটিকে এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ এবারের নির্বাচনে বালুরঘাটে নজর রাজ্যবাসীর ৷ কারণ, এই কেন্দ্রে এবার বিজেপির প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ ঊনিশের ভোটেও এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন তিনি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য বিপ্লব মিত্রকে ৷

স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এবার এই কেন্দ্রটি জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ৷ ইতিমধ্যে তিনি দু’দফায় জেলা সফর করে গিয়েছেন ৷ এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ কারণ, তৃণমূলের থিংক ট্যাংক খুব ভালো করেই জানে, এই নির্বাচনে এই আসনে জয় পাওয়া গেলে সেটাই হবে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের ইউএসপি ৷ এবারের নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূলের সঙ্গে আরএসপি জয়দেবকুমার সিদ্ধান্তকে প্রার্থী করলেও মূল লড়াই ঘাসফুল আর পদ্মফুলেরই হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

Balurghat Constituency
বালুরঘাট লোকসভার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী

আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী জেলা ৷ সমস্যাও রয়েছে অনেক৷ অনুপ্রবেশ, পাচারে কুখ্যাত ৷ ইদানীং সাপের বিষ কিংবা সোনা পাচারের করিডর হিসাবে এই জেলা কার্যত ‘স্বীকৃত’ ৷ রয়েছে বেকারত্ব, অপর্যাপ্ত রেল যোগাযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো আরও বহু সমস্যা ৷ এসব সমস্যা নিয়েই আগামী 26 এপ্রিল নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবেন এই কেন্দ্রের 15 লাখ 66 হাজার 952 জন ভোটার ৷

বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ইটাহার ছাড়াও রয়েছে কুশমণ্ডি, কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর ও হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র ৷ ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল মূল তিন দলের মধ্যে ৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিজেপির সুকান্ত মজুমদার, তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং আরএসপির রণেন বর্মন৷ সুকান্ত মোট 5 লাখ 39 হাজার 317 ভোট (45 শতাংশ) পেয়ে জয়ী হন ৷ 5 লাখ 6 হাজার 24 ভোট (42.2 শতাংশ) পেয়ে পরাজিত হন অর্পিতা ৷ রণেন ছিলেন তৃতীয় স্থানে ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল 72 হাজার 990 (6.1 শতাংশ) ৷ 33 হাজার 293 ভোটে জেতেন সুকান্ত ৷

Balurghat Constituency
2019 লোকসভার ফলাফল

এগারো সালের আগে পর্যন্ত বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ছিল বাম রাজত্ব ৷ আরএসপি, সিপিএম তো বটেই, ইটাহার কেন্দ্রটি ছিল সিপিআইয়ের দখলে ৷ 2011 সালের ঘাসফুলের সুনামিতে সেই দুর্গের পতন ঘটে ৷ শুধুমাত্র কুশমণ্ডিতে নর্মদাচন্দ্র রায় ছাড়া বাকি ছ’টি আসনেই ফোটে ঘাসফুল ৷ কুশমণ্ডিতে হেরে যান কংগ্রেস প্রার্থী পার্থসারথী সরকার ৷ ইটাহার কেন্দ্রে তৎকালীন মন্ত্রী, সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেন তৃণমূলের অমল আচার্য ৷

কুমারগঞ্জে সিপিএমের মাফুজা খাতুন পরাজিত হন তৃণমূলের মহমুদা বেগমের কাছে ৷ বালুরঘাটে জেতেন তৃণমূলের শংকর চক্রবর্তী, হেরে যান আরএসপি প্রার্থী, মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী৷ তপনে তৃণমূলের বাচ্চু হাঁসদা হারিয়ে দেন আরএসপির খাড়া সোরেনকে ৷ গঙ্গারামপুরে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায়, পরাজিত হন সিপিএমের নন্দলাল হাজরা ৷ হরিরামপুরে তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র হারিয়ে দেন সিপিএম প্রার্থী তথা মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসকে ৷

ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে আগের ছবিটা অনেকটাই বদলে যায় ৷ সাতটির মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্রে জয় ধরে রাখে তৃণমূল ৷ ইটাহারে ঘাসফুলের অমল আচার্য ফের হারিয়ে দেন সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্য়ায়কে ৷ কুশমণ্ডিতে আরএসপির নর্মদাচন্দ্র রায় পরাজিত করেন তৃণমূলের রেখা রায়কে ৷ কুমারগঞ্জে জেতেন তৃণমূলের তোরাফ হোসেন মণ্ডল, হারেন সিপিএমের মাফুজা খাতুন ৷ তৃণমূলের প্রার্থী শংকর চক্রবর্তীর হাত থেকে বালুরঘাট কেন্দ্রের পুনর্দখল নেন আরএসপির বিশ্বনাথ চৌধুরী ৷ তপনে তৃণমূল প্রার্থী বাচ্চু হাঁসদা হারিয়ে দেন আরএসপির রঘু উরাওকে ৷ গঙ্গারামপুরে তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায়কে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের গৌতম দাস ৷ যদিও ভোটের পরেই গৌতম তৃণমূলে যোগ দেন ৷ হরিরামপুর কেন্দ্রে অঘটন ঘটিয়ে সিপিএমের রফিকুল ইসলাম হারিয়ে দেন তৃণমূলের বিপ্লব মিত্রকে ৷

ঊনিশের ভোটে এই কেন্দ্রের কোনায় কোনায় ওঠে গৈরিক ঝান্ডা ৷ সেবারই প্রথম বালুরঘাট কেন্দ্রে ওড়ে বিজেপির পতাকা ৷ তার প্রভাব পড়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও ৷ সেবার ইটাহারে তৃণমূল প্রার্থী মোশারফ হুসেন বিজেপির অমিতকুমার কুণ্ডুকে পরাজিত করেন ৷ কুশমণ্ডিতে তৃণমূলের রেখা রায় হারিয়ে দেন বিজেপির রঞ্জিতকুমার রায়কে ৷ কুমারগঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপির মানস সরকার তৃণমূল প্রার্থী তোরাফ হোসেন মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন ৷ হরিরামপুরে বিজেপির নীলাঞ্জন রায়কে হারিয়ে ফের বিধায়ক হন তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র ৷ তবে বালুরঘাট, তপন ও গঙ্গারামপুর যায় বিজেপির দখলে ৷ বালুরঘাটে বিজেপির অশোককুমার লাহিড়ি হারিয়ে দেন তৃণমূলের শেখর দাশগুপ্তকে ৷ তপনে তৃণমূলের কল্পনা কিস্কুকে হারিয়ে দেন বিজেপির বুধরাই টুডু ৷ গঙ্গারামপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায় জয়ী হন, পরাজিত হন তৃণমূলের গৌতম দাস ৷

চব্বিশে কী হবে, তা লাখ টাকার প্রশ্ন ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলছেন, “একদিকে সততা, অন্যদিকে হিন্দি সিনেমার মতো এলাকার উন্নয়ন ৷ এই দুইয়ের যোগফলেই জয়ী হবেন বিপ্লব মিত্র ৷ তাঁর বাড়িতে কেউ গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা না করে কেউ ফিরে আসেন না ৷ বাম আমলে বিপদে আপদে বিপ্লব মিত্র ছাড়া উদ্ধার করার মতো কোনও ডানপন্থী নেতা ছিলেন না ৷ আর সুকান্তবাবু তো নিজের সাংসদ কোটার অর্থই খরচ করতে পারেননি ৷ নিজের দত্তক নেওয়া ছোট্ট একটা গ্রামেও উন্নয়ন করতে পারেননি ৷ বিপদের সময় মানুষ তাঁর দেখা পায়নি ৷ তিনি দল নিয়ে ব্যস্ত ৷ মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে ৷ তাই জয় নিয়ে আমরা 100 শতাংশ নিশ্চিত ৷”

অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর বক্তব্য, “সুকান্তবাবু জেলার জন্য যে কাজ করেছেন, স্বাধীনতার পর এই কেন্দ্রের কোনও সাংসদ তা করতে পারেননি ৷ গোটা জেলাজুড়ে কাজ করেছেন তিনি ৷ রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা, সবই করেছেন ৷ আমাদের ধারণা, যা হাওয়া উঠেছে তাতে এবার তিনি প্রায় দু’লাখ ভোটে জিতবেন ৷ আর বিপ্লব মিত্র তো পরিবারতন্ত্র নিয়েই ব্যস্ত ৷ তাঁর ভাইদের কেউ পৌরসভার চেয়ারম্যান, কেউ আদালতের পিপি ৷ সবচেয়ে বড় কথা, তিনি কখন কোন দল করেন, তারও ঠিক নেই ৷ নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি জেলায় উন্নয়নমূলক কোনও কাজ করেছেন, কেউ দেখতে পাবেন না ৷”

আরও পড়ুন:

  1. জলপাইগুড়িতে কি আবার ফুটবে পদ্ম, নাকি ফিরবে ঘাসফুলের আধিপত্য !
  2. টিগ্গাকে টক্কর দিয়ে কি আলিপুরদুয়ারে ঘাসফুলের প্রকাশ ঘটাতে পারবেন বরাইক ?
  3. পাচার সমস্যা, বেকারত্ব! কোচবিহারে কি এবার ঘাসফুল ফুটবে ?

বালুরঘাটের কুর্সি কি ফের পদ্মের ?

বালুরঘাট, 22 এপ্রিল: বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা দক্ষিণ দিনাজপুর ৷ ছোট্ট জেলা ৷ মাত্র ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্র ৷ তাই লোকসভা নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রটিকে এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ এবারের নির্বাচনে বালুরঘাটে নজর রাজ্যবাসীর ৷ কারণ, এই কেন্দ্রে এবার বিজেপির প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ ঊনিশের ভোটেও এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন তিনি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য বিপ্লব মিত্রকে ৷

স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এবার এই কেন্দ্রটি জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ৷ ইতিমধ্যে তিনি দু’দফায় জেলা সফর করে গিয়েছেন ৷ এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ কারণ, তৃণমূলের থিংক ট্যাংক খুব ভালো করেই জানে, এই নির্বাচনে এই আসনে জয় পাওয়া গেলে সেটাই হবে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের ইউএসপি ৷ এবারের নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূলের সঙ্গে আরএসপি জয়দেবকুমার সিদ্ধান্তকে প্রার্থী করলেও মূল লড়াই ঘাসফুল আর পদ্মফুলেরই হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

Balurghat Constituency
বালুরঘাট লোকসভার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী

আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী জেলা ৷ সমস্যাও রয়েছে অনেক৷ অনুপ্রবেশ, পাচারে কুখ্যাত ৷ ইদানীং সাপের বিষ কিংবা সোনা পাচারের করিডর হিসাবে এই জেলা কার্যত ‘স্বীকৃত’ ৷ রয়েছে বেকারত্ব, অপর্যাপ্ত রেল যোগাযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো আরও বহু সমস্যা ৷ এসব সমস্যা নিয়েই আগামী 26 এপ্রিল নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবেন এই কেন্দ্রের 15 লাখ 66 হাজার 952 জন ভোটার ৷

বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ইটাহার ছাড়াও রয়েছে কুশমণ্ডি, কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর ও হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র ৷ ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল মূল তিন দলের মধ্যে ৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিজেপির সুকান্ত মজুমদার, তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং আরএসপির রণেন বর্মন৷ সুকান্ত মোট 5 লাখ 39 হাজার 317 ভোট (45 শতাংশ) পেয়ে জয়ী হন ৷ 5 লাখ 6 হাজার 24 ভোট (42.2 শতাংশ) পেয়ে পরাজিত হন অর্পিতা ৷ রণেন ছিলেন তৃতীয় স্থানে ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল 72 হাজার 990 (6.1 শতাংশ) ৷ 33 হাজার 293 ভোটে জেতেন সুকান্ত ৷

Balurghat Constituency
2019 লোকসভার ফলাফল

এগারো সালের আগে পর্যন্ত বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ছিল বাম রাজত্ব ৷ আরএসপি, সিপিএম তো বটেই, ইটাহার কেন্দ্রটি ছিল সিপিআইয়ের দখলে ৷ 2011 সালের ঘাসফুলের সুনামিতে সেই দুর্গের পতন ঘটে ৷ শুধুমাত্র কুশমণ্ডিতে নর্মদাচন্দ্র রায় ছাড়া বাকি ছ’টি আসনেই ফোটে ঘাসফুল ৷ কুশমণ্ডিতে হেরে যান কংগ্রেস প্রার্থী পার্থসারথী সরকার ৷ ইটাহার কেন্দ্রে তৎকালীন মন্ত্রী, সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেন তৃণমূলের অমল আচার্য ৷

কুমারগঞ্জে সিপিএমের মাফুজা খাতুন পরাজিত হন তৃণমূলের মহমুদা বেগমের কাছে ৷ বালুরঘাটে জেতেন তৃণমূলের শংকর চক্রবর্তী, হেরে যান আরএসপি প্রার্থী, মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী৷ তপনে তৃণমূলের বাচ্চু হাঁসদা হারিয়ে দেন আরএসপির খাড়া সোরেনকে ৷ গঙ্গারামপুরে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায়, পরাজিত হন সিপিএমের নন্দলাল হাজরা ৷ হরিরামপুরে তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র হারিয়ে দেন সিপিএম প্রার্থী তথা মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসকে ৷

ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে আগের ছবিটা অনেকটাই বদলে যায় ৷ সাতটির মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্রে জয় ধরে রাখে তৃণমূল ৷ ইটাহারে ঘাসফুলের অমল আচার্য ফের হারিয়ে দেন সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্য়ায়কে ৷ কুশমণ্ডিতে আরএসপির নর্মদাচন্দ্র রায় পরাজিত করেন তৃণমূলের রেখা রায়কে ৷ কুমারগঞ্জে জেতেন তৃণমূলের তোরাফ হোসেন মণ্ডল, হারেন সিপিএমের মাফুজা খাতুন ৷ তৃণমূলের প্রার্থী শংকর চক্রবর্তীর হাত থেকে বালুরঘাট কেন্দ্রের পুনর্দখল নেন আরএসপির বিশ্বনাথ চৌধুরী ৷ তপনে তৃণমূল প্রার্থী বাচ্চু হাঁসদা হারিয়ে দেন আরএসপির রঘু উরাওকে ৷ গঙ্গারামপুরে তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায়কে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের গৌতম দাস ৷ যদিও ভোটের পরেই গৌতম তৃণমূলে যোগ দেন ৷ হরিরামপুর কেন্দ্রে অঘটন ঘটিয়ে সিপিএমের রফিকুল ইসলাম হারিয়ে দেন তৃণমূলের বিপ্লব মিত্রকে ৷

ঊনিশের ভোটে এই কেন্দ্রের কোনায় কোনায় ওঠে গৈরিক ঝান্ডা ৷ সেবারই প্রথম বালুরঘাট কেন্দ্রে ওড়ে বিজেপির পতাকা ৷ তার প্রভাব পড়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও ৷ সেবার ইটাহারে তৃণমূল প্রার্থী মোশারফ হুসেন বিজেপির অমিতকুমার কুণ্ডুকে পরাজিত করেন ৷ কুশমণ্ডিতে তৃণমূলের রেখা রায় হারিয়ে দেন বিজেপির রঞ্জিতকুমার রায়কে ৷ কুমারগঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপির মানস সরকার তৃণমূল প্রার্থী তোরাফ হোসেন মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন ৷ হরিরামপুরে বিজেপির নীলাঞ্জন রায়কে হারিয়ে ফের বিধায়ক হন তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র ৷ তবে বালুরঘাট, তপন ও গঙ্গারামপুর যায় বিজেপির দখলে ৷ বালুরঘাটে বিজেপির অশোককুমার লাহিড়ি হারিয়ে দেন তৃণমূলের শেখর দাশগুপ্তকে ৷ তপনে তৃণমূলের কল্পনা কিস্কুকে হারিয়ে দেন বিজেপির বুধরাই টুডু ৷ গঙ্গারামপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ রায় জয়ী হন, পরাজিত হন তৃণমূলের গৌতম দাস ৷

চব্বিশে কী হবে, তা লাখ টাকার প্রশ্ন ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলছেন, “একদিকে সততা, অন্যদিকে হিন্দি সিনেমার মতো এলাকার উন্নয়ন ৷ এই দুইয়ের যোগফলেই জয়ী হবেন বিপ্লব মিত্র ৷ তাঁর বাড়িতে কেউ গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা না করে কেউ ফিরে আসেন না ৷ বাম আমলে বিপদে আপদে বিপ্লব মিত্র ছাড়া উদ্ধার করার মতো কোনও ডানপন্থী নেতা ছিলেন না ৷ আর সুকান্তবাবু তো নিজের সাংসদ কোটার অর্থই খরচ করতে পারেননি ৷ নিজের দত্তক নেওয়া ছোট্ট একটা গ্রামেও উন্নয়ন করতে পারেননি ৷ বিপদের সময় মানুষ তাঁর দেখা পায়নি ৷ তিনি দল নিয়ে ব্যস্ত ৷ মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে ৷ তাই জয় নিয়ে আমরা 100 শতাংশ নিশ্চিত ৷”

অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর বক্তব্য, “সুকান্তবাবু জেলার জন্য যে কাজ করেছেন, স্বাধীনতার পর এই কেন্দ্রের কোনও সাংসদ তা করতে পারেননি ৷ গোটা জেলাজুড়ে কাজ করেছেন তিনি ৷ রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা, সবই করেছেন ৷ আমাদের ধারণা, যা হাওয়া উঠেছে তাতে এবার তিনি প্রায় দু’লাখ ভোটে জিতবেন ৷ আর বিপ্লব মিত্র তো পরিবারতন্ত্র নিয়েই ব্যস্ত ৷ তাঁর ভাইদের কেউ পৌরসভার চেয়ারম্যান, কেউ আদালতের পিপি ৷ সবচেয়ে বড় কথা, তিনি কখন কোন দল করেন, তারও ঠিক নেই ৷ নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি জেলায় উন্নয়নমূলক কোনও কাজ করেছেন, কেউ দেখতে পাবেন না ৷”

আরও পড়ুন:

  1. জলপাইগুড়িতে কি আবার ফুটবে পদ্ম, নাকি ফিরবে ঘাসফুলের আধিপত্য !
  2. টিগ্গাকে টক্কর দিয়ে কি আলিপুরদুয়ারে ঘাসফুলের প্রকাশ ঘটাতে পারবেন বরাইক ?
  3. পাচার সমস্যা, বেকারত্ব! কোচবিহারে কি এবার ঘাসফুল ফুটবে ?
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.